একাদশ শ্রেণির প্রবন্ধ রচনা সাজেশন
আগের প্রতিবেদনে যে প্রবন্ধ রচনাগুলির উত্তর বলে দিয়েছিলাম -
1. বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য
2. বাংলা উৎসব
3. দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান / বিজ্ঞানের আশীর্বাদ না অভিশাপ
4. একটি গাছের আত্মকথা
5. পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
6. রক্তদান জীবন দান
7. বৃক্ষরোপণ / একটি গাছ একটি প্রাণ
8. চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা / খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ
9. তোমার জীবনের লক্ষ্য
10. তোমার দেখা একটি মেলা / একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
11. বিশ্ব উষ্ণায়ন
• উপরের প্রবন্ধ রচনাগুলির উত্তর পেতে হলে - ক্লিক করো।
॥ মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব॥
[মানস - মানচিত্র : ভূমিকা-প্রাকৃতিক পরিবেশ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ-পরিবেশ সৃষ্টিতে নাগরিকের দায়িত্ব উপসংহার।]
1) ভূমিকা : কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, উকিল, ডাক্তার, অধ্যাপক-এঁরা সকল দেশেই একই প্রকৃতির মানুষ-সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা, প্রেম-ঈর্ষার অনুভূতি এঁদের এক। তবু পৃথিবীর নানা অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন, সামাজিক চরিত্র, শারীরিক অভ্যাস, রীতি-নীতির মধ্যে কতই না পার্থক্য চোখে পড়ে। আর এই পার্থক্যের মূলে আছে মানুষের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ।
2) প্রাকৃতিক পরিবেশ : আদিমকালে মানুষ ছিল সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতি-নির্ভর। বর্তমানের মানুষ ততখানি প্রকৃতি-নির্ভর না হলেও প্রাকৃতিক পরিবেশ তথা ভৌগোলিক অবস্থানকে এড়িয়ে যেতে পারে না। ফলে মানুষের জীবনে ও চরিত্রে আঞ্চলিক প্রভাব প্রকট হয়ে ওঠে। মৌসুমী অঞ্চলের পলিমাটি ও প্রচুর বৃষ্টির আর্দ্রতায় তার সঙ্গে বাঙালী চরিত্রের কোমলতা ঠিক সঙ্গতি রক্ষা করেই চলে। বাংলার জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতি বাঙালীকে স্বভাবতই স্নেহকাতর, ভাবপ্রবণ ও রসচঞ্চল করেছে। আবার পার্বত্য অঞ্চল তিব্বত-নেপালের অধিবাসীদের করেছে পর্বতের মতই গম্ভীর, হাস্যহীন ও সংকল্পে অনড়। নদী বা সমুদ্র অঞ্চলের মানুষ হয় নৌ-চালনায় নিপুণ, সাহসী ও কর্মঠ। ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী জাতিরা মনোরম জলবায়ুর জন্যই খোশমেজাজী, চঞ্চল স্বভাবের। সমভূমি অঞ্চলের জমি কৃষিকার্যের উপযোগী-তাই এসব অঞ্চলের প্রধান উপজীবিকা কৃষিকাজ।
3) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ : প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়াও মানবজীবনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রভাবও কম নয়। গ্রামীণ সমাজ ও নাগরিক সমাজের কথাই ধরা যাক। বিশ্বের সব দেশেই গ্রাম ও শহরের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। গ্রামীণ সমাজে আজও সুখে-দুঃখে, উৎসবে আনন্দে মানুষে মানুষে যে আত্মীয়তার, যে প্রীতির বন্ধন লক্ষ্য করি, শহরের বুকে মানুষে মানুষে নেই সেই প্রীতি-ভালবাসার বন্ধন, পরিবর্তে বিচ্ছিন্নতা ও নিঃসঙ্গতার অভিশাপ শহরবাসীর নিত্যসঙ্গী। তাছাড়া গ্রামের মানুষ হয় সরল, শান্ত ও ধীর, কিন্তু শহরের লোক হয় চালাক চতুর ও চটপটে। গ্রামের মানুষ বড় বেশি স্পর্শকাতর, সংস্কারাচ্ছন্ন ও কিছুটা পরশ্রীকাতর, শহরের মানুষ সেই তুলনায় আধুনিক ও প্রগতিশীল চিন্তা-ভাবনার অনুগামী। এই প্রসঙ্গে আসে পারিবারিক পরিবেশের কথাও। পারিবারিক পরিবেশ বলতে পরিবারের শিক্ষা, রুচি, মননশীলতা ও আর্থিক অবস্থা। সুশিক্ষিত, সুরুচি-সম্পন্ন ও সুউচ্চ পরিবারের সন্তানের সঙ্গে অশিক্ষিত, কুরুচিসম্পন্ন ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানের অনেক পার্থক্যই চোখে পড়ে।
4) পরিবেশের সৃষ্টিতে নাগরিকদের দায়িত্ব : সব দেশের মানুষেরই বড় প্রত্যাশা, দেশের বুকে এমন এক সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ গড়ে উঠুক যে পরিবেশে মানুষ লাভ করবে সুশিক্ষা, সচ্ছলতা, আনন্দোজ্জ্বল পরমায়ু। দেশের শিক্ষিত নাগরিকগণ, ধর্মসংস্কারকগণ, মানব-প্রেমীগণ, দেশনেতৃবৃন্দ উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশকে অশিক্ষা, দারিদ্র্য, গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করতে পারেন।
5) উপসংহার : প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে যে বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সেই পরিবেশকে দূষণমুক্ত করার একটা ব্যাপক প্রয়াস শুরু হয়েছে পৃথিবী জুড়ে। কিন্তু শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশের শুদ্ধি ঘটালেই হবে না, মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশেরও শুদ্ধি-সাধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সামাজিক চেতনার সংস্কার ব্যতিরেকে একটি দেশ কখনোই সার্বিক উন্নতির মুখ দেখতে পারে না। জল মাটি বাতাসের শুদ্ধিকরণের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোরও সংস্কার সাধন করতে পারলে তবেই বর্তমান ও আগামী কালের মানুষ বাঁচার উপযুক্ত পরিবেশ লাভ করবে।
প্রবন্ধ রচনা class 11 , প্রবন্ধ রচনা একাদশ শ্রেণি
--------------------------------------------------
॥ শরীরচর্চা ও খেলাধুলা॥
[মানস-মানচিত্র : ভূমিকা (শিক্ষাচর্চায় খেলাধুলার স্থান)-শরীরচর্চার বিবিধ দিক-ব্যায়াম ও আসন-শরীরচর্চায় খেলাধূলার স্থান-গৃহাভ্যন্তরীণ ও বহিরঙ্গণের খেলাধুলা-উপসংহার।]
1) ভূমিকা-শিক্ষাচর্চায় খেলাধুলার স্থান : পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য বিদ্যাশিক্ষার সঙ্গে শরীরচর্চার ও খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা আছে । মানুষ বুদ্ধিপ্রধান জীব। দেহ-শক্তির দিক থেকে বাঘ, সিংহ, সাপ-এমন-কী একটা বিছে মানুষ অপেক্ষা শক্তিশালী। তথাপি মানুষ বুদ্ধিবলেই এইসব জীবজন্তুকে পিঞ্জরাবদ্ধ করেছে। নিঃসন্দেহে এটি মানুষের বুদ্ধিমত্তার গৌরবচিহ্ন। তবুও বলা যায়, দেহশক্তি দ্বারা অপরকে দৈহিক লাঞ্ছনা দেওয়া বা ধ্বংস করা ছাড়াও দেহকে পুষ্ট ও সবল রাখবার প্রয়োজনীয়তা আছে।
2) শরীরচর্চার বিবিধ দিক : শরীরকে অটুট ও নীরোগ রাখতে হলে ব্যায়ামচর্চার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ব্যায়ামের প্রধান উপকারিতা হল পেশীসমূহকে চঞ্চল ও সজীব রাখা; ফলে রক্ত, প্লীহা, যকৃৎ, পাকস্থলী প্রভৃতি আপন আপন কর্ম বজায় রেখে সমস্ত শরীরটিকে ক্রমোন্নতির দিকে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়। শরীরচর্চায় গতানুগতিক ব্যায়াম ছাড়াও বিশেষ বিশেষ আসনের প্রয়োজনীয়তা আজ, সারা বিশ্বে স্বীকৃত। ব্যায়াম যেমন পেশীকে পুষ্ট করে, আসন তেমনি জীবদেহের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিকে সতেজ ও সবল রাখে। এতে হজমশক্তি বাড়ে। বর্তমানে অনেক যোগী মনে করেন-ব্যায়াম নয়, আসনই স্বাস্থ্যরক্ষার নিশ্চিন্ত পথ। খালি হাতে ব্যায়াম ও যন্ত্র নিয়ে ব্যায়ামের মধ্যে কোনটি কার পক্ষে উপযোগী হবে, সে-বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া উচিত। দক্ষ ব্যক্তির পরামর্শ-মত ব্যায়াম ও আসনচর্চা করলে অচিরে শুভফল পাওয়া যাবে-শরীরে আসবে লালিত্য, পেশীগুলি হবে সরলতর এবং মনে স্ফূর্তির জোয়ার বয়ে যাবে। আসনই হোক অথবা ব্যায়ামই হোক, ছাত্ররা কখনই একাকী ব্যায়াম ও আসনের সাধনা করতে ইচ্ছুক হয় না। সেজন্য প্রয়োজন বাবা-মা-দাদা বা শিক্ষক মহাশয়ের উপযুক্ত পরিচালনা ও নির্দেশনা। সুখের বিষয় বর্তমানে সুদক্ষ নির্দেশকের পরিচালনায় পাড়ায় পাড়ায় অনেক ব্যায়ামাগার গড়ে উঠেছে। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের দেহোপযোগী ব্যায়াম এবং আসন শিক্ষার ব্যবস্থা আছে।
3) শরীরচর্চায় খেলাধুলার স্থান : শরীরচর্চায় খেলাধুলার দান অসীম। খেলাধুলায় বিমুখ কোনো ছাত্র যতই অধ্যয়নশীল হোক-তার প্রকৃত মানসিক বিকাশ অসম্ভব। খেলাধুলার মাধ্যমে যে শিক্ষালাভ করা যায়, জীবনের ক্ষেত্রে সেগুলির প্রভাব নিঃসন্দেহে তুলনাহীন। খেলার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের ক্রীড়াপদ্ধতির বৈশিষ্ট্যের মধ্য দিয়ে মনস্তাত্ত্বিকেরা শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য অন্বেষণ করেন। অনেক মনস্তাত্ত্বিকের মতে খেলার মাঠে শিশুর মন থেকে সর্ববিধ বিকার অন্তর্হিত হয়ে যায়। পারস্পরিক সহযোগিতা, খেলোয়াড়ি মনোভাব-জনিত জয়-পরাজয়ের গৌরব ও অগৌরবকে তুচ্ছ করে খেলার মূল উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সচেতনতা, রেফারি, আমপায়ার প্রভৃতি নির্দেশকদের মান্য করবার শিক্ষা খেলার মধ্যে দিয়েই গড়ে ওঠে। একজন ক্রীড়াবিমুখ গ্রন্থকীট ছাত্র অপেক্ষা একজন খেলোয়াড় ছাত্র অনেক বেশি প্রাণবন্ত।
4) আভ্যন্তরীণ ও বহিরঙ্গণের খেলাধুলা : খেলাধুলা বিবিধ-গৃহাভ্যন্তরীণ খেলাধুলা ও খোলা মাঠের খেলাধুলা। ছাত্রদের উচিত বাইরে খোলা-মাঠের হাওয়ায় খোলা মাঠের খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকা। এই সকল খেলার মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় হল ফুটবল, হা-ডু-ডু ও হকি। যদিও ক্রিকেট খেলা রাজার খেলা, তপাপি এই খেলাটি 'খেলার রাজা' হিসাবে সমধিক আদৃত। এ ছাড়া টেনিস, রাগবি, ওয়াটারপোলো, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি নানাপ্রকার খেলা আছে। এসব খেলার প্রসারের পরিধি সীমিত। ভলিবলের জনপ্রিয়তাও কম নয়। গৃহাভ্যন্তরীণ খেলা হিসাবে ছাত্রদের মধ্যে ক্যারামের খেলার প্রচলন সর্বব্যাপক। এ ছাড়া, টেবিল-টেনিস খেলার ব্যবস্থাও আজকাল অনেক বিদ্যালয়ে ও কলেজ-কমনরুমে দেখতে পাওয়া যায়। গৃহাভ্যন্তরীণ খেলা হিসাবে বিলিয়ার্ড ও দাবা খেলা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদ্যমান। শিশুদের আভ্যন্তরীণ খেলার মধ্যে লুডো, বাগাটোলি ইত্যাদি বিখ্যাত।
5) উপসংহার : "চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু"। তাই খেলাধুলা চালাবার জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা থাকা উচিত এবং সমগ্রভাবে শরীরচর্চা ও খেলাধুলার জন্য বিশেষ অনুকূল পরিমণ্ডলের সৃষ্টি করতেই হবে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায়:
* খেলাধুলা শিক্ষার অঙ্গ।
* শরীরচর্চায় ব্যায়ামের স্থান।
* সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা ও উপায়।
class 11 bengali rochona, class 11 rachana
--------------------------------------------------
॥ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ॥
[মানস-মানচিত্র : ভূমিকা-একমাত্র পরিচয় কবি-জন্ম ও বাল্যকাল, শিক্ষা-কবি প্রতিভার উন্মেষ ও বিলাত যাত্রা-অতন্দ্র কাব্যসাধনা-নোবেল পুরস্কার লাভ বিচিত্র সাহিত্য রচনা-প্রকৃতি প্রেম ও মানবপ্রীতি-স্বদেশ ভাবনা-উপসংহার।]
1) ভূমিকা : ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে সেদিন যেন প্রতিভার মিছিল ঘটে গেল। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, বঙ্কিমচন্দ্র, নেতাজী সুভাষচন্দ্র-বাংলার বুকে একের পর এক ক্ষণজন্মা পুরুষের অভ্যুদয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ সেই প্রতিভার রাজ্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা।
তাঁর একমাত্র পরিচয় কবি : রবীন্দ্রনাথ রাষ্ট্রনেতা নন, দার্শনিক নন, বৈজ্ঞানিক নন, বিপ্লবী সৈনিক নন, তেজস্বী বাগ্মীও নন। কিন্তু কেবল সাহিত্য রচনার মধ্য দিয়েও যে একটা যুগের পটপরিবর্তন করা যায়, কাব্যবীণায় সমগ্র বিশ্ববাসীকে যে মোহিত ও বিহ্বল করা যায়, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যই তার চরম সাক্ষ্য।
2) জন্ম ও বাল্যকাল : ১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দের ৭ই মে, ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর প্রখ্যাত ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেন। ঐ বিখ্যাত ধনী পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের বাল্যকাল কেটেছে একেবারে অনাড়ম্বরভাবে।
3) শিক্ষা : শৈশবে বিদ্যার্জনের জন্য রবীন্দ্রনাথ নর্মাল স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু বিদ্যালয়ের সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে, বদ্ধ পরিবেশে পড়াশুনা তাঁর মনঃপুত হোল না। তিনি বিদ্যালয় ত্যাগ করলেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষালাভ তাঁর হোল না, কিন্তু বাড়ীতে গুরুজনের নিকট ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, বাংলা সাহিত্য, সব বিষয়েই তিনি গভীর মনোযোগের সহিত অধ্যয়ন করতেন।
4) কবি প্রতিভার উন্মেষ ও বিলাতযাত্রা : অতি অল্পবয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথ কবিতা রচনা করতেন। তিনি কবিতা রচনার প্রথম প্রেরণা পান ভাগ্নে সত্যর কাছ থেকে। অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বালক রবীন্দ্রনাথের কবিতা রচনার এই প্রয়াসকে ছেলেমানুষী বলে উপেক্ষা করলেন না, বরং রবীন্দ্রনাথের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগাবার জন্য তিনি পরোক্ষভাবে বালক রবীন্দ্রনাথকে উৎসাহিত করতেন। ইতোমধ্যে রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার জন্য বিলাত যাত্রা করেন। তখন মধ্যম-অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথের ব্যবস্থাপনায় এবং সেখানকার অধ্যাপকদের তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রনাথ বেশ কিছুদিন ইংরেজী সাহিত্য চর্চা করলেন। কয়েক বছর পরে তিনি স্বদেশে ফিরলেন।
5) অতন্দ্র কাব্যসাধনা ও সর্বোচ্চ সম্মানলাভ : স্বদেশে ফিরে তিনি অখণ্ড মনোযোগের সহিত কবিতা রচনা শুরু করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই রবীন্দ্রনাথের কবি প্রতিভা বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিণতি লাভ করল। তাঁর লেখনীর মুখ দিয়ে বন্যাস্রোতের মত বের হোল অজস্র রচনা সম্ভার-কাব্য-কবিতা-প্রবন্ধ-উপন্যাস-ছোটগল্প-নাটক-পত্রসাহিত্য-জীবন-চরিত-রম্যরচনা। রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাবে বাংলার সাহিত্য জগতে নতুন যুগের সূচনা হোল। যেদিন তাঁর 'গীতাঞ্জলি' কাব্য 'নোবেল প্রাইজ' লাভ করল (১৯১৩ খ্রীঃ), সেদিন সারা পৃথিবীর লোক বিস্মিত হয়েছিল।
6) বিচিত্র রচনা : শুধু গীতাঞ্জলির জন্যই তিন শ্রেষ্ঠ কবির সম্মান পান নি, 'মানসী', 'সোনার তরী', 'চিত্রা', 'খেয়া', 'পূরবী', 'মহুয়া', 'পুনশ্চ' প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থের অর্ন্তভুক্ত। 'বিসর্জন', 'মালিনী', 'ডাকঘর', 'রাজা', 'অচলায়তন' প্রভৃতি নাটক; 'নৌকাডুবি', 'গোরা', 'চোখের বালি' প্রভৃতি উপন্যাস; বহু ছোটগল্প, অজস্র প্রবন্ধ ও পত্রসাহিত্য রচনা সম্ভারের কলেবর বৃদ্ধি করেছে।
7) প্রকৃতি প্রেম ও মানবপ্রীতি : রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রাণকে সর্বপ্রকারে সঞ্জীবিত করেছিল এই রূপ-রস-ভরা প্রকৃতি। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের যোগ কেবল একালের নয়, জন্মজন্মান্তরের-একথা রবীন্দ্রনাথের মত আর কোন কবি অনুভব করেন নি। তাঁর মত আর কোন কবি প্রকৃতির সঙ্গে এত নিবিড় একাত্মতা উপলব্ধি করেন নি। রবীন্দ্রনাথ দেবতাকে লক্ষ্য করলেন মানুষের মধ্যে। গাইলেন-'প্রিয়জনে যাহা দিই, তাহা দিই দেবতারে।'
8) স্বদেশ ভাবনা : রবীন্দ্রনাথ কেবল তাঁর কাব্যকুঞ্জে আপনার মধ্যে আপনি মগ্ন ছিলেন না। দুঃখ-দৈন্যে ভরা এ সংসারের দৈন্য যখনই তাঁর নজরে পড়েছে তখনই তিনি নেমে এসেছেন অসহায় মানুষের মধ্যে।
যেখানে অন্যায়, যেখানে অমানুষিকতা, সেখানে তিনি শাসকের রক্তচক্ষুকেও উপেক্ষা করতেন। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের সংবাদ শুনে তিনি বৃটিশ সরকারের দেওয়া 'স্যার' উপাধি ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করেছিলেন।
9) উপসংহার : এমনই এক প্রতিভা-সূর্য যেদিন মধ্যগগন থেকে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ল সেদিন কোন এক ইংরেজ মনীষী শোকবার্তা প্রেরণ করে বলেছিলেন- "The torch of the world passes away." রবীন্দ্রনাথ সশরীরে আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু আমাদের চিন্তা-ভাবনায়, ভাবুকতায়, মনে-মননে ও কল্পনায় তাঁর ভাবদেহটি মৃত্যুঞ্জয়। মৃত্যুর পরেও তিনি যে আমাদের মনের মধ্যে বেঁচে থাকতে চান-সেকথা তাঁরই ভাষায় স্মরণ করি-"
" তখন কে বলে গো, সেই প্রভাতে নেই আমি
সকল খেলায় করব খেলা এই আমি
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।"
একাদশ শ্রেণির প্রবন্ধ রচনা সাজেশন | Class 11 Prabandha Rachana Suggestion
• উপসংহার : একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টার বাংলা প্রবন্ধ রচনাগুলি তিনটি পর্বে উত্তরসহ বলে দিয়েছি। সমস্ত কিছু Menu অপসনে ক্লিক করলেই পেয়ে যাবে। আমাদের এই প্রতিবেদনগুলি যদি আপনাদের কাজে লাগে তবেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।
আরো পড়ুন | Link |
---|---|
1. একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিষ্টার বাংলা সাজেশন | Click Here |
2. একাদশ শ্রেণীর প্রবন্ধ রচনা সাজেশন | Click Here |
• আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে Follow করো -
SOCIAL MEDIA | FOLLOW |
---|---|
Whatsapp Group | Click Here |
Telegram | Click Here |
• Comment করো :(contact-form)
শুভেচ্ছা সহ,
WB Semester Team