একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর
রাজনৈতিক তত্ত্বের মৌলিক ধারণা সমূহ | Class 11 Semester 2 Political Science Question Answer
১। আইন বলতে কী বোঝ? আইনের বৈশিষ্টগুলি কি কি লেখ ?
উত্তর : আইন : আইনের সংজ্ঞা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। অর্থাৎ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে আইনকে সর্বদা অভিজ্ঞতা দিয়ে অনুভব করতে হবে। আইন হল সেইসব নিয়ম, যে নিয়মগুলির মাধ্যমে সমাজের মানুষের কল্যাণ সাধিত হয়।
জন অস্টিনের মতে আইনের সংজ্ঞা : জন অস্টিনের মতানুসারে আইন হল সার্বভৌমের আদেশ। তিনি বলেছেন আইন ইল অধস্তনের প্রতি ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক কর্তৃত্বের আদেশ।
হল্যান্ডের মতে আইনের সংজ্ঞা : তার মত অনুসারে আইন হল সেই সব নিয়ম যেগুলি মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী। যা সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ দিয়ে প্রযুক্ত হয়।
আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ আইনের অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য রয়েছ। সেগুলি হল-
(ক) আইনের নিয়ন্ত্রণ মানুষের চিন্তাভাবনার উপর থাকে না।
(খ) আইন মূলত সুনির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট এবং সর্বজনীন যা সমাজের সমস্ত মানুষের উপর সমানভাবে প্রযোজ্য
(গ) আইন সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় এবং আইন গতিশীল।
(ঘ) আইন মূলত অনেকগুলি বিধিবদ্ধ আচার-আচরণ।
(ঙ) আইন সর্বদা সবার উপরে থাকবে। তাই আইন সমাজের বিভিন্ন রীতিনীতি, প্রথা উপরে থাকে বলেই আইন সার্বভৌম শক্তির সমর্থন।
(চ) আইন হল মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী নিয়ম।
--------------------------------------
2। স্বাধীনতা কাকে বলে? স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ বা প্রকারভেদ সম্পর্কে বিশ্লেষণ বারো ?
উত্তর : স্বাধীনতার সংজ্ঞা : স্বাধীনতার সংজ্ঞা নানা রাষ্ট্রবিদগন নানান ভাবে দিয়েছেন। স্বাধীনতা মূলত অধিকারের ফল। তবে স্বাধীনতা হল অতি শাসনের বিপরীত অবস্থা। যখন কোন ব্যক্তি সমস্ত প্রতিকূলতাকে বাদ দিয়ে নিজস্ব চিন্তাভাবনা বিকাশ করার অধিকারকে স্বাধীনতা বলে।
জন স্টুয়ার্ট মিলের মতে স্বাধীনতার সংজ্ঞা : জন স্টুয়ার্ট মিল ছিলেন ব্যক্তিস্বাধীনতায় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিরোধী ছিলেন। তাঁর লেখা 'On Liberty' গ্রন্থে স্বাধীনতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন- স্বাধীনতা হল ব্যক্তির চিন্তাধারার অব্যাহত প্রকাশ। ল্যাস্কির মতে স্বাধীনতার সংখ্যা: ইতিবাচক অর্থে ল্যাঙ্কি স্বাধীনতা বলতে বুঝিয়েছেন স্বাধীনতা এমন এক পরিবেশের সযত্ন সংরক্ষণকে বোঝায়, সেখানে কোনো ব্যক্তি তার আত্মবিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ ভোগ করতে পারে।
স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ বা প্রকারভেদ: স্বাধীনতাকে প্রধানত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন –
(ক) প্রাকৃতিক স্বাধীনতা : মানুষ যখন প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করত অর্থাৎ রাষ্ট্র সৃষ্টির আগের অবস্থায় যে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করত, তাকে প্রাকৃতিক স্বাধীনতা বলা হত।
(খ) জাতীয় স্বাধীনতা : জাতিরাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ, জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার করার স্বাধীনতাকে জাতীয় স্বাধীনতা বলা হয়।
(গ) সামাজিক স্বাধীনতা : সমাজের বিভিন্ন ঐতিহ্য, রীতিনীতি, নৈতিকতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাকে সামাজিক স্বাধীনতা বলা হয়, যা প্রধানত আইনের দ্বারা রক্ষিত হয়।
(ঘ) আইনসংগত স্বাধীনতা : রাষ্ট্র দ্বারা আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাকে আইনসংগত স্বাধীনতা বলা হয়। এই রকম স্বাধীনতা মূলত সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট এবং সুনিয়ন্ত্রিত। আইন সংংগত স্বাধীনতাকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন: ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।
--------------------------------------
class 11 2nd semester political science question answer
3. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কাকে বলে ? 'পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভবও নয় কাম্য নয়' এই মত কতটা তুমি সমর্থন কর আলোচনা কর ?
উত্তর : স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে। যেমন- শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ, ও বিচার বিভাগ এবং এই প্রতিটি বিভাগগুলি যখন স্বতন্ত্রভাবে নিজের কাজগুলি করতে পারে, তখন তাকে স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলা হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায়।
কঠোর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ যোগ্যতা: এই নীতির বাস্তব প্রয়োগ অসম্ভব। তার কারণ হল-
(ক) সরকারের প্রতিটি বিভাগে সহযোগিতার অভাব : সরকারের প্রতিটি বিভাগ নিজের কাজের ব্যস্ত থাকবে যদি এই নীতি কার্যকরী হয়। যার ফলে একে অপরের বিভাগ সাহায্য করবে না, ফলে সুষ্ঠু শাসনকার্যে বাধা সৃষ্টি করবে।
(খ) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অনুপযোগী : একে অপরের অর্থাৎ পারষ্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিই হল গণতান্ত্রিক সরকারের মূল মন্ত্র। তাই এই নীতি বাস্তব প্রয়োগ অসম্ভব।
কঠোর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সমীচীনও নয় : এই কঠোর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সমীচীন নয়, তার প্রধান কারণগুলি হল-
(ক) বিভাগীয় স্বৈরাচারিতার পথ প্রশস্ত: স্বৈরাচারের বদলে ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে না, যদি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কার্যকরী হয়। তবে স্বৈরাচারের পথ প্রশস্ত হবে।
(খ) বিভাগগুলিতে প্রধান্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিবাদঃ যদি এই নীতি কার্যকরী হয়, তবে সরকারের সব বিভাগ নিজেদের মধ্যে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হবে।
(গ) ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় প্রয়োগ: এই নীতির প্রয়োগ সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় অসম্ভব। কারণ এই রকম শাসনব্যবস্থায় আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সরকার গঠন করে যার ফলে এক বিভাগ আর এক বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
(গ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই নীতি প্রয়োগ: এখানেও এই নীতি সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। বরং প্রতিটি বিভাগের উপর অপর দুটি বিভাগের কিছু না কিছু নিয়ন্ত্রণ দেখা যায়। এই কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই নীতির পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতি প্রযুক্ত হয়েছে।
আলোচ্য আলোচনার পর বলতে পারি পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রে এই নীতি সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগ না হলেও আংশিক প্রয়োগ করা সম্ভব।
--------------------------------------
উপসংহার : একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিষ্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান সিলেবাসের প্রতিটি অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর পেতে হলে Menu Option এ ক্লিক করো। আমাদের এই লেখাগুলি আশা করছি আপনাদের কাজে লাগবে।
আরো পড়ুন : আড্ডা - প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর
আরো পড়ুন : ছুটি - গল্পের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর
SOCIAL MEDIA | FOLLOW |
---|---|
Whatsapp Group | Click Here |
Telegram | Click Here |
• Comment করো :
শুভেচ্ছা সহ,
WB Semester Team