একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
class 11 semester 2 history question answer | class 11 2nd Semester history question answer
1. কৌটিল্যের লেখা অর্থশাস্ত্রে গ্রন্থে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ধারণা কী ছিল।
অথবা,
কৌটিল্যের বক্তব্য রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে। ৩+৫=৮
উত্তর : প্রাচীন ভারতের রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বিশদ আলোচনা রয়েছে। যা আমি নীচে আলোচনা করছি -
i. অর্থশাস্ত্রে উল্লেখিত রাজতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা :
(ক) রাজার কর্তব্য ও দায়িত্ব : প্রজাদের উপর রাজার দায়িত্ব পালন করা রাজতন্ত্রের একটি অন্যতম দিক। যেমন - বাইরে থেকে আগত শত্রুদের দেখা, সাধারণ মানুষদের সম্পত্তি ও জীবন রক্ষা করা ইত্যাদি রাজার দায়িত্ব। গুরুত্বপূর্ন।
(খ) বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র : উচ্চবংশজাত ও বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন কৌটিল্য। সুতরাং তার মতে কোন রাজা উচ্চবংশজাত এবং রাজ্য বংশানুক্রমিকভাবে শাসন করেন, তবে রাজার উপর প্রজাদের আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
(গ) রাজার বাধাহীন বা স্বেচ্ছাসেবী ক্ষমতা : অর্থশাস্ত্রে রাজতন্ত্রের প্রতীকরূপে রাজাকে বর্ননা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হলেন রাষ্ট্রের মধ্যে রাজা। অর্থাৎ রাজার আদেশ সবাইকে মানতে হবে।
ii. অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত ধারণা : অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে যে বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেগুলি নিম্নরূপঃ
(ক) রাষ্ট্রের আয়তন : আমার মত অনুসারে, বৃহদায়তন রাষ্ট্রের পক্ষপাতী কৌটিল্য ছিলেন। কেননা বড়ো রাষ্ট্র হলে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব আদায় করতে পারবে। যার ফলে শক্তিশালী প্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব।
(খ) সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব : অর্থশাস্ত্রের সপ্তাঙ্গতত্ত্ব রাষ্ট্রনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কৌটিল্য জীবদেহের সঙ্গে রাষ্ট্রকে তুলনা করে সাতটি অঙ্গের কথা বলেছেন। যেমন- স্বামী, কোশ, জনাম অমাত্য, দন্ড, মিত্র ও দুর্গ।
(গ) ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র : রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের উপর কৌটিল্য জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- 1. রাষ্ট্র পুরোহিততান্ত্রিক হবে না, 2. রাজা রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থের জন্য সিদ্ধান্ত নিবেন কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধর্মশাস্ত্র ব্যাখ্যার জন্য পুরোহিতের আদেশ রাজা শুনবেন।
(ঘ) রাজার গুনাবলী : কৌটিল্যের মতে রাজা হবেন- কঠোর পরিশ্রমী, সংযমী, দূরদর্শী, স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ও কূটনীতিপরায়ন।
(ঙ) জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র : অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে কৌটিল্য জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে জোর দিয়েছেন সমাজসেবামূলক কাজ ও প্রজাবর্গের কল্যানসাধন কাজের উপর।
---------------------------------------------------
class 11 2nd Semester history 1st chapter questions answer
2. পারস্যের 'ক্ষত্রপ' ও চিনের' ম্যান্ডারিন' এর বিবরন দাও।
অথবা,
প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য স্যাট্রাপ ও স্যান্ডারিনদের ভূমিকা কী ছিল। 8+8
উত্তর : আমরা জানি প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য বিশাল সাম্রাজ্যের শাসকেরা সুদক্ষ প্রশাসন গড়ে তোলেন। যথা- পারস্যের ক্ষত্রপ বা স্যাট্রাপ ও চিনের ম্যান্ডারিন।
1. পারস্যের স্যাট্রাপ বা ক্ষত্রপ : পারস্য সাম্রাজ্যকে পরিচালনার জন্য পারসিক সম্রাট সাইরাস সাম্রাজ্যকে বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র-বৃৎ প্রদেশে ভাগ করে। আর এইগুলিকেই স্যাট্রাপি বলে। আর প্রাদেশিক শাসনকর্তা প্রত্যেকটি স্যাট্রাপিতে নিয়োগ করা হত যা স্যাট্রাপ বা ক্ষত্রপ নামে পরিচিতি।
(ক) স্যাট্রাপ শব্দের উৎপত্তি ও অর্থ : গ্রিক শব্দ 'স্যাট্রাপিয়া' থেকে 'স্যাট্রাপ' শব্দের উৎপত্তি। পারসিক মত অনুসারে স্যাট্রাপ হলেন সাম্রাজ্যের রক্ষাকর্তা। এর আভিধানিক অর্থ প্রাচীন পারস্যের প্রদেশ গুলির শাসক।
(খ) স্যাট্রাপদের মর্যাদা ও নিয়োগ : স্যাট্রাপদের প্রাদেশিক শাসনকর্তা পারসিক সম্রাটগণই নিযুক্ত করতেন। স্যাট্রাপের পুত্রই স্যাট্রাপ অর্থাৎ বংশানুক্রমিক ব্যবস্থা ছিল। এরাই ছিলেন মর্যাদার দিক থেকে প্রদেশের গভর্নরের সমান।
(গ) স্যাট্রাপদের কার্যাবলী : এদের বেশ কয়েকটি কার্যাবলী ছিল। যেমন- 1. এরা ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার বিচার করেন। 2. স্যাট্রাপদের দুর্গগুলির দেখাশোনা ও সৈনিক নিয়োগ করতেন 3. তাঁরা প্রদেশগুলির কর আদায় করতেন। 4. তারা সাধারণ মানুষদের নিরাপদ রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন।
(ঘ) স্যাট্রাপদের বিদ্রোহ : খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্যাট্রাপদের বিদ্রোহ শুরু হয়। এদের বিদ্রোহ দেখা যায় দরায়ুসের আমলে এবং তৃতীয় আলেকজান্ডারের সময়কালে এঁদের সবথেকে বড়ো আকারের বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
2. চিনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা : চিনে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক থেকে বিশ শতকের সূচনাকালে যে আমলাতান্ত্রিক গোষ্ঠী গড়ে ওঠে যা 'ম্যান্ডারিন' নামে পরিচিতি।
(ক) ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার উৎস ও অর্থ : পোর্তুগিজ শব্দ ম্যান্ডারিম থেকে 'ম্যান্ডারিন 'শব্দটির উৎপত্তি। তবে উংকু আব্দুল আজিজের মতানুসারে, মালাক্কায় সুলতানি আমলে যেসব পোর্তুগিজরা বাস করত, তার মধ্যে মেন্তেরিন উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের বলা হত। এই শব্দের বিবর্তিত রূপ ম্যান্ডারিন।
(খ) ম্যান্ডারিনদের স্তর ও পোশাক-পরিচ্ছদ : উচ্চশ্রেনির ম্যান্ডারিনরা পদমর্যাদার দিক থেকে চিনা প্রধানমন্ত্রীর সমপর্যায় ছিলেন। সারস পাখির চিহ্ন তাদের পোশাকে আঁকা হত। এছাড়াও সাধারন ম্যান্ডারিনরা আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসন পরিচালনা রক্ষা করতেন। এঁদের পোশাকে সোনার লেজযুক্ত পাখির চিহ্ন আঁকা হয়।
(গ) ম্যান্ডারিনদের কার্যাবলি : তাঁদের বেশ কয়েকটি কার্যাবলি ছিল। যেমন: 1. ম্যান্ডারিনরা প্রশাসনিক কাজে সম্রাটকে পরামর্শ দিতেন। 2. চিনের রাজা ও স্থানীয় শাসকের মধ্যে যোগাযোগ করতেন। 3. এছাড়াও গ্রামাঞ্চলে কর সংগ্রহে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
(ঘ) অবসান : পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ম্যান্ডারিনদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যে পরীক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল তা বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে চিনে মাঞ্জু বংশের পতনের সাথে সাথে ১৯১১ সালে ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার অবসান ঘটে। পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে।
-----------------------------------------
class 11 history 1st chapter question answer | class 11 2nd Semester history question answer
3. জিয়াউদ্দিন বারানির ফতোয়া-ই-জাহান্দারিতে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে কি কী ধারণা ছিল। ৮
উত্তর : জিয়াউদ্দিন বারানি এবং তাঁর লেখা 'ফতোয়া-ই-জাহান্দারি' গ্রন্থের সুলতানি যুগের শাসনব্যবস্থায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে এই গ্রন্থের রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আমি নীচে আলোচনা করছি-
i. ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থে রাজতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা :
(ক) রাজার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা : বারানির মতে সুলতান ঐশ্বরিক শক্তি দ্বারা শ্রীমন্ডিত। মুসলিম শাসকেরা ছিলেন ঈশ্বরের ছায়া। তাই এই জগতের সমস্ত কল্যানসাধনের দায়িত্ব অর্পন করেছেন ঈশ্বরের উপর। অর্থাৎ সব কাজের জন্য ঈশ্বরের কাছেই দায়বদ্ধ সুলতান।
(খ) রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ : বারানির মতানুসারে, যেসব জনগন ধর্মীয় আদর্শ থেকে আলাদা হয়েছে তাদেরকে সৎ পথে আনার জন্য রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারেন সুলতান।
(গ) আইনের সংরক্ষন : উক্ত গ্রন্থে সুলতানের ইসলামি কর্তব্য অনুসারে ধর্মীয় আইনের সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করেছেন। অতএব সুলতান প্রয়োজন মনে করলে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বিধানের পরিমার্জন করতে পারেন।
(ঘ) রাজকীয় মর্যাদা প্রদর্শন : সুলতান রাজতন্ত্রের সম্মান রক্ষার জন্য নিজের আচরণে গাম্ভীর্য ও ব্যক্তিগত বিলাসব্যসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বারানি বলেন, পারস্যের সাসানীয় রাজতন্ত্রের আদবকায়দার কথা।
ii.ফতোয়া-ই-জাহান্দারি গ্রন্থে রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত ধারনাঃ
(ক) জনকল্যাণমূলক কার্যাবলী : সুলতানকে রাষ্ট্রনীতি ও সুশাসন পরিচালনার জন্য সব সময় প্রজাকল্যান সাধনের কাজে থাকতে হবে বারানির মতে। সুলতান নানা রকম জনহিতকর কার্যাবলির মাধ্যমেই প্রজাদের আনুগত্য অর্জনে সক্ষম হবেন।
(খ) দুই রাজ্যের তত্ত্ব : ঈশ্বরের এবং ইহজগতের রাজ্য – এই দুই ধরনের রাজ্যের কথা জিয়াউদ্দিন বারানি বলেছেন। তাঁর মতানুসারে একদিকে ঈশ্বরের রাজ্যই হল যথার্থ রাজ্য। যা প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। অন্যদিকে ইহজগতের রাজ্য ঈশ্বরের ইচ্ছায় পরিচালিত হয়।
(গ) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : বারানির মতানুসারে সত্য, ন্যায় ও ধর্মের প্রতিষ্ঠা করাই হল মূলত ন্যায়বিচার। তিনি তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন প্রজাদের জীবন ও সম্পত্তির রক্ষা করবেন ন্যায়বিচার দিয়ে। কেননা ঈশ্বরের রাজ্যে সমস্ত মানুষের সমানাধিকার আছে।
(ঘ) ধর্মীয় বিধিপালন : ফতোয়া-ই-জাহান্দারিতে বারানির বলেছেন শরিয়ত অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করা একজন শাসকের কর্তব্য এবং সুরক্ষাদানের জন্য সঙ্গে ইসলাম ধর্মকে ধর্মের প্রসার ও প্রচার কাজে নিযুক্ত থাকা। এগুলি ছাড়া তিনি আরো বলেছেন রাজকর্তব্য এমনভাবে পালন করবেন যেন ঈশ্বরদত্ত সকল ক্ষমতা ও সম্পদ বিধর্মীর বিনাশ এবং অন্যায় প্রতিরোধে ব্যবহৃত হতে পারে।
-----------------------------------------
রাষ্ট্রের প্রকৃতি - একাদশ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
4 . দিল্লি সুলতানিতে ইকতা ব্যবস্থার সংস্কার ও বিবর্তন আলোচনা করো।
অথবা,
• ইকতা ব্যবস্থার বিবর্তন আলোচনা করো। ৮
উত্তর : ইকতা ব্যবস্থার বিবর্তন: ইকতা ব্যবস্থা হল দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রব্যবস্থার অনুতম একটি দিক। এই ব্যবস্থা ভারতে ইলতুৎমিসের সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবস্থা সুলতানের আমলে বিবর্তন হতে থাকে। যা নীচি আমি এখন বিস্তারিত আলোচনা করছি-
(ক) ইলতুৎমিসের আমল : তাঁর আমলে খালিসা জমি সংরক্ষণের প্রমান ভারতে প্রথম পাওয়া যায়। দিল্লির পাশের এবং দোয়াবের কিছু অঞ্চল খালিসার মধ্যে ছিল। তিনি তুর্কি সেনাপতিদের হাতে এই সব জমির রাজস্ব আদায়ের ভার অর্পন করেন। যা সেনানায়ক ও সেনাবাহিনীদের বেতন এই ভূখন্ডের রাজস্বকে গণ্য করা হত। এই ব্যবস্থাকে ভারতে ইকতা প্রথার আদিপর্ব বলে ধরা হত।
(খ) আলাউদ্দিন খলজির আমল : তাঁর আমলে সুলতানের অশ্বারোহী সেনাবাহিনীকে নগদ বেতন দেওয়া হত কিন্তু অন্যদিকে সুলতানের সেনাপতিদের ক্ষেত্রে ইকতা প্রদান বহাল থাকে।
(গ) গিয়াসউদ্দিন বলবনের আমল: ইকতা ব্যবস্থা তাঁর আমলে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছিল। যার ফলে বলবন ইকতা ব্যবস্থার শৃঙ্খলা কঠোর হাতে পুনঃপ্রবর্তনের ব্যবস্থা নেয়। তিনি প্রধানত রাজস্ব ভোগের অধিকার উপযুক্ত ব্যক্তিদের প্রদানের পাশাপাশি ইকতার উদ্বৃত্ত রাজস্ব মুকতির কাছ থেকে দিল্লিতে জমা দেওয়ার আদেশ দেয়।
(ঘ) গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের আমল : তিনি এই ব্যবস্থায় পরিবর্তনের বদলে নীতির কঠোরতা কিছুটা শিথিল করে এবং বেশ কয়েকটি সংশোধনীমূলক নীতি পদক্ষেপ নেন। যথা দেওয়ান-ই-ওয়াজিরৎ-এর উপর আর্দেশ দেন নির্ধারিত রাজস্ব ১/১০ অথবা ১/১১ অংশ বা এর থেকে কম হবে।
(ঙ) মহম্মদ বিন তুঘলকের আমল : এই ব্যবস্থার বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে তাঁর আমলে। যেমন - 1. সেনা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এবং রাজস্ব আদায় আলাদা করা হয়। 2. সর্বোচ্চ নিলামদারকে রাজস্ব আদায়ের ভার নিলাম ডেকে দেওয়া হত।
(চ) ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমল : তিনি অভিজাতদের বেতন সহ প্রচুর সুযোগসুবিধা বাড়ান, যার প্রভাব ইকতা ব্যবস্থাতে পড়ে। নগদ অর্থের বদলে সেনাবাহিনীর সকল সদস্যদের বেতন খাতে ইকতা বরাদ্দ করা হয়। এছাড়া সরকারিভাবে মুকতির বংশানুক্রমিক অধিকার ইকতার উপর তিনি মেনে নেন।
(ছ) লোদি বংশের আমল : এই আমলে এই ব্যবস্থার নতুন কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে ইকতার পরিবর্তে সরকার নাম এই সময় ব্যবহৃত হয়। যা একটি সরকার বেশ কয়েকটি পরগনা নিয়ে গড়ে উঠত। সরকারের প্রাপ্ত ভূখন্ডগুলিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে ইজারা বন্দোবস্ত দিতে পারতেন।
-----------------------------------------
একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টার ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
5. দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি আলোচনা করো।
অথবা,
• দিল্লির সুলতানি শাসন কি ধর্মাশ্রয়ী ছিল। ৮
উত্তর : দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতি বা চরিত্র ধর্মাশ্রয়ী ছিল কি না, এই নিয়ে আধুনিক ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়।
ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রের পক্ষে যুক্তিঃ ঈশ্বরীপ্রসাদ, এ এল শ্রীবাস্তব, আর পি ত্রিপাঠী ইত্যাদি ঐতিহাসিকগণ সুলতানি রাষ্ট্রের ধর্মাশ্রয়ী চরিত্র সম্পর্কে বিভিন্ন যুক্তি দিয়েছেন -
(ক) ফতোয়া-ই- জাহান্দারি গ্রন্থের ভাষ্য : ধর্ম ও রাজনীতি পরষ্পরের সহায়ক একথা 'ফতোয়া-ই- জাহান্দারি' গ্রন্থে বারানি বলেছেন। শুধুমাত্র ধর্মীয় পথেই মন্দ জগতকে শুদ্ধ করা যায়। তাঁর মতে, শাসকের কর্তব্য ইসলামের বিধানকে সর্বোচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠা করা।
(খ) ধর্মকেন্দ্রিক আইনবিধি : ঈশ্বরীপ্রসাদের মত অনুসারে, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রের ভিত্তিতেই সুলতানি আমলের আইনগুলি তেরি হয়েছিল। তিনি আরো বলেন সুলতানি করব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল শরিয়তের বিধান অনুযায়ী। আর দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে অমুসলমানদের পণ্য করা হত।
(গ) খলিফাতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য : অধিকাংশ শাসকই ভারতের সুলতানি আমলে খলিফাতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতেন। যথা- 1.খলিফার প্রতিনিধি হিসেবে ইলতুৎমিস স্বীকৃতিপত্র সংগ্রহ করেন। 2. খলিফার নাম উৎকীর্ণ করার পাশাপাশি বলবন তাঁর মুদ্রায় খলিফার সহকারী বলে নিজেকে প্রচার করেন।
ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রের বিপক্ষে যুক্তি : সতীশচন্দ্র, ড. নিজামি, মহম্মদ হাবিব ইত্যাদি ঐতিহাসিকগন ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রের বিপক্ষে অনেক মত দিয়েছেন। যেমন-
(ক) খলিফার প্রতি বাহ্যিক আনুগত্য : বাহ্যিক এবং প্রযোজনভিত্তিক আনুগত্য ছিল খলিফার প্রতি দিল্লির সুলতানদের। ভারতে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও প্রতিভার দ্বারা সুলতানরা ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। জানতে পারা যায় খলিফার অনুমোদন অমান্য করার ক্ষমতা মহম্মদ বিন তুঘলক ও আলাউদ্দিন খলজির মতো বেশ কয়েকজন সুলতান রাখতেন।
(খ) জিয়াউদ্দিন বারানির অভিমত : বারানি জানতে যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের অস্ত্রের জোরে বা ধর্মীয় অনুজ্ঞায় ভারতে ধর্মীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। সুতরাং তিনি 'ফতোয়া' গ্রন্থে অন্যত্র তিনভাগে ভাগ করেছেন ইহজাগতিক রাজ্যকে। তিনি সেইসব রাজ্যকে তৃতীয় শ্রেণির রাজ্য হিসেবে কল্পনা করেছেন যেখানে রাজা স্বৈরাচারী এবং তার শাসন প্রণালী শরীয়তের আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
(গ) শরিয়ত বহির্ভূত নির্দেশ : শরিয়তের ভাষ্যের বিপরীত সুলতানি আমলের বহু নির্দেশনামা ছিল। যেমন- প্রাণদণ্ড, সুদ গ্রহণ শরিয়তের বিধান অনুসারে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু মুসলমানদের প্রাণদণ্ড সুলতানি রাষ্ট্রে দেওয়া হত।
(ঘ) জাওয়াবিত জারির স্বাধীনতা : সার্বভৌম ও স্বাধীন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন দিল্লির সুলতানরা। তারা জাওয়াবিত রাষ্ট্রের প্রয়োজনে জারি করতেন। এর সঙ্গে কোন ও সামঞ্জস্য ছিল না ধর্মীয় নির্দেশের। বরং কোরানের ভাষ্যের বিপরীত অনেক নির্দেশ ছিল।
উপসংহার : আলোচ্য আলোচনার পর বলতে পারি মিশ্র ও ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের প্রকৃতিতে পরিলক্ষিত হয়। তবে এটা বলা যায়, মধ্যযুগের ভারতবর্ষের সুলতানির রাষ্ট্রের প্রকৃতি ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ধর্মাশ্রয়ী ছিল না।
-----------------------------------------
class 11 semester 2 history question answer | class 11 2nd Semester history question answer
• লেখকের শেষ বক্তব্য :
যারা আমাদের অফলাইন কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করছো, তাদেরকে এইসব প্রশ্নগুলির উত্তর সহ Free PDF দেওয়া হবে। কিন্তু যারা অন্যান্য জায়গা থেকে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে পড়াশোনা করছো তারা আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হতে পারো। আপনাদের এই লেখাগুলো কাজে লাগলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।
আরো পড়ুন | Link |
---|---|
1. একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিষ্টার ইতিহাস সাজেশন | Click Here |
2. একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিষ্টার ইতিহাস প্রশ্নপত্র 2025 | Click Here |
4. ভাবসম্মিলন কবিতা - বিদ্যাপতি | Click Here |
5. একাদশ শ্রেণির নতুন বাংলা প্রশ্নপত্র | Click Here |
• আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে Follow করো -
SOCIAL MEDIA | FOLLOW |
---|---|
Whatsapp Group | Click Here |
Telegram | Click Here |
• Comment করো :(contact-form)
শুভেচ্ছা সহ,
WB Semester Team
Ranasas bolta ki bojho
উত্তরমুছুন