একাদশ শ্রেণীর প্রবন্ধ রচনা
• ভূমিকা : তোমরা জানো WBCHSE Board এর নতুন নিয়ম অনুসারে একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টার বাংলা বিষয়ে মোট 40 নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। আর এই 40 নম্বরের মধ্যে 10 নম্বরের একটি প্রবন্ধ রচনা করতে হবে। তাই একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টার বাংলা পরীক্ষার জন্য যে প্রবন্ধ রচনাগুলি পরীক্ষায় আসার সম্ভাবনা খুব বেশি, সেই প্রবন্ধ রচনাগুলির উত্তর সহ বলে দিলাম। চলো শুরু করি -
শরীরচর্চা ও খেলাধুলা
[প্রবন্ধ-সংকেত : ভূমিকা (শিক্ষাচর্চায় খেলাধুলার স্থান) শরীরচর্চার বিবিধ দিক-ব্যায়াম ও আসন-শরীরচর্চায় খেলাধুলার স্থান-আভ্যন্তরীণ ও বহিরঙ্গণের খেলাধুলা-উপসংহার।]
(ক) ভূমিকা-শিক্ষাচর্চায় খেলাধুলার স্থান : পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য বিদ্যাশিক্ষার সঙ্গে শরীরচর্চার ও খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা অনুধাবন করতে হলে কোনো এক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের- "Education is the harmonious development of body and soul"-এই উক্তিটির তাৎপর্য উপলব্ধি করা প্রয়োজন। মানুষ বুদ্ধিপ্রধান জীব সন্দেহ নেই। দেহ-শক্তির দিক থেকে বাঘ, সিংহ, সাপ এমন কী একটা বিছে মানুষ অপেক্ষা শক্তিশালী। তথাপি মানুষ বুদ্ধিবলেই এইসব জীবজন্তুকে পিঞ্জরাবদ্ধ করেছে। নিঃসন্দেহে এটি মানুষের বুদ্ধিমত্তার গৌরবচিহ্ন। তবুও বলা যায়, দেহশক্তি দ্বারা অপরকে দৈহিক লাঞ্ছনা দেওয়া বা ধ্বংস করা ছাড়াও দেহকে পুষ্ট ও সবল রাখবার প্রয়োজনীয়তা আছে।
(খ) শরীরচর্চার বিবিধ দিক : শরীরকে অটুট ও নীরোগ রাখতে হলে ব্যায়ামচর্চার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ব্যায়ামের প্রধান উপকারিতা হল পেশীসমূহকে চঞ্চল ও সজীব রাখা ফলে রক্ত, প্লীহা, যকৃৎ, পাকস্থলী প্রভৃতি আপন আপন কর্ম বজায় রেখে সমস্ত শরীরটিকে ক্রমোন্নতির দিকে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়। শরীরচর্চায় গতানুগতিক ব্যায়াম ছাড়াও বিশেষ বিশেষ আসনের প্রয়োজনীয়তা আজ, সারা বিশ্বে স্বীকৃত। ব্যায়াম যেমন পেশীকে পুষ্ট করে, আসন তেমনি জীবদেহের গ্রন্থিকে সতেজ ও সবল রাখে। এতে হজমশক্তি বাড়ে। তাই ছাত্রছাত্রীদের দেহোপযোগী ব্যায়াম এবং আসন শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত।
(গ) শরীরচর্চায় খেলাধুলার স্থান : শরীরচর্চায় খেলাধুলার দান অসীম। খেলাধুলায় বিমুখ কোনো ছাত্র যতই অধ্যয়নশীল হোক তার প্রকৃত মানসিক বিকাশ অসম্ভব। খেলাধুলার মাধ্যমে যে শিক্ষালাভ করা যায়, জীবনের ক্ষেত্রে সেগুলির প্রভাব নিঃসন্দেহে তুলনাহীন। খেলার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের ক্রীড়াপদ্ধতির বৈশিষ্ট্যের মধ্য দিয়ে মনস্তাত্ত্বিকেরা শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য অন্বেষণ করেন। অনেক মনস্তাত্ত্বিকের মতে খেলার মাঠে শিশুর মন থেকে সর্ববিধ বিকার অন্তর্হিত হয়ে যায়। পারস্পরিক সহযোগিতা, খেলোয়াড়ি মনোভাব-জনিত জয়-পরাজয়ের গৌরব ও অগৌরবকে তুচ্ছ করে খেলার মূল উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সচেতনতা, রেফারি, আমপায়ার প্রভৃতি নির্দেশকদের মান্য করবার শিক্ষা খেলার মধ্যে দিয়েই গড়ে ওঠে। একজন ক্রীড়াবিমুখ ছাত্র অপেক্ষা একজন খেলোয়াড় ছাত্র অনেক বেশি প্রাণবন্ত।
(ঘ) আভ্যন্তরীণ ও বহিরঙ্গণের খেলাধুলা : খেলাধুলা বিবিধ-গৃহাভ্যন্তরীণ খেলাধুলা ও খোলা মাঠের খেলাধুলা। ছাত্রদের উচিত বাইরে খোলা-মাঠের হাওয়ায় খোলা মাঠের খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকা। এই সকল খেলার মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় হল ফুটবল, হা-ডু-ডু ও হকি। যদিও ক্রিকেট খেলা রাজার খেলা, তপাপি এই খেলাটি 'খেলার রাজা' হিসাবে সমধিক আদৃত। এ ছাড়া টেনিস, রাগবি, ওয়াটারপোলো, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি নানাপ্রকার খেলা আছে। এসব খেলার প্রসারের পরিধি সীমিত। ভলিবলের জনপ্রিয়তাও কম নয়। গৃহাভ্যন্তরীণ খেলা হিসাবে ছাত্রদের মধ্যে ক্যারামের খেলার প্রচলন সর্বব্যাপক। এ ছাড়া, টেবিল-টেনিস খেলার ব্যবস্থাও আজকাল অনেক বিদ্যালয়ে ও কলেজ-কমনরুমে দেখতে পাওয়া যায়। গৃহাভ্যন্তরীণ খেলা হিসাবে বিলিয়ার্ড ও দাবা খেলা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদ্যমান। শিশুদের আভ্যন্তরীণ খেলার মধ্যে লুডো, বাগাটোলি ইত্যাদি বিখ্যাত।
(ঙ) উপসংহার : "চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু"। -এই বাসনা চরিতার্থ হবে তখনই যখন খেলাকে সহায়ক পাঠ্যবিষয় মনে করে শিশুদের জন্য আরো প্রচুর পরিমাণে খেলাধুলার ও মাঠের ব্যবস্থা হবে। খেলাধুলা চালাবার জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা থাকা উচিত এবং সমগ্রভাবে শরীরচর্চা ও খেলাধূলার জন্য বিশেষ অনুকূল পরিমণ্ডলের সৃষ্টি করতেই হবে।
• এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় :
* খেলাধুলা শিক্ষার অঙ্গ।
* শরীরচর্চায় ব্যায়ামের স্থান।
* সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা ও উপায়।
-----------------------------------------------------
prabandha rachana class 11| class 10 prabandha racahana
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ
[প্রবন্ধ সংকেত : ভূমিকা-একমাত্র পরিচয় কবি-জন্ম ও বাল্যকাল, শিক্ষা-কবি প্রতিভার উন্মেষ ও বিলাত যাত্রা-অতন্দ্র কাব্যসাধনা-নোবেল পুরস্কার লাভ-বিচিত্র সাহিত্য রচনা-প্রকৃতি প্রেম ও মানবপ্রীতি-স্বদেশ ভাবনা-উপসংহার।]
(ক) ভূমিকা : ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে সেদিন যেন প্রতিভার মিছিল ঘটে গেল। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, বঙ্কিমচন্দ্র, নেতাজী সুভাষচন্দ্র-বাংলার বুকে একের পর এক ক্ষণজন্মা পুরুষের অভ্যুদয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ সেই প্রতিভার রাজ্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা।
(খ) একমাত্র পরিচয় কবি : রবীন্দ্রনাথ রাষ্ট্রনেতা নন, দার্শনিক নন, বৈজ্ঞানিক নন, বিপ্লবী সৈনিক নন, তেজস্বী বাগ্মীও নন। কিন্তু কেবল সাহিত্য রচনার মধ্য দিয়েও যে একটা যুগের পটপরিবর্তন করা যায়, কাব্যবীণায় সমগ্র বিশ্ববাসীকে যে মোহিত ও বিহ্বল করা যায়, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যই তার চরম সাক্ষ্য।
(গ) জন্ম ও বাল্যকাল : ১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দের ৭ই মে, ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর প্রখ্যাত ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেন। ঐ বিখ্যাত ধনী পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের বাল্যকাল কেটেছে একেবারে অনাড়ম্বরভাবে।
(ঘ) শিক্ষা : শৈশবে বিদ্যার্জনের জন্য রবীন্দ্রনাথ নর্মাল স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু বিদ্যালয়ের সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে, বদ্ধ পরিবেশে পড়াশুনা তাঁর মনঃপুত হোল না। তিনি বিদ্যালয় ত্যাগ করলেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষালাভ তাঁর হোল না, কিন্তু বাড়ীতে গুরুজনের নিকট ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, বাংলা সাহিত্য, সব বিষয়েই তিনি গভীর মনোযোগের সহিত অধ্যয়ন করতেন।
(ঙ) কবি প্রতিভার উন্মেষও বিলাতযাত্রা : অতি অল্পবয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথ কবিতা রচনা করতেন। তিনি কবিতা রচনার প্রথম প্রেরণা পান ভাগ্নে সত্যর কাছ থেকে। অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বালক রবীন্দ্রনাথের কবিতা রচনার এই প্রয়াসকে ছেলেমানুষী বলে উপেক্ষা করলেন না, বরং রবীন্দ্রনাথের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগাবার জন্য তিনি পরোক্ষভাবে বালক রবীন্দ্রনাথকে উৎসাহিত করতেন। ইতোমধ্যে রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার জন্য বিলাত যাত্রা করেন। তখন মধ্যম-অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথের ব্যবস্থাপনায় এবং সেখানকার অধ্যাপকদের তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রনাথ বেশ কিছুদিন ইংরেজী সাহিত্য চর্চা করলেন। কয়েক বছর পরে তিনি স্বদেশে ফিরলেন।
(চ) অতন্দ্র কাব্যসাধনা ও সর্বোচ্চ সম্মানলাভ : স্বদেশে ফিরে তিনি অখণ্ড মনোযোগের সহিত কবিতা রচনা শুরু করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই রবীন্দ্রনাথের কবি প্রতিভা বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিণতি লাভ করল। তাঁর লেখনীর মুখ দিয়ে বন্যাস্রোতের মত বের হোল অজস্র রচনা সম্ভার-কাব্য-কবিতা-প্রবন্ধ-উপন্যাস-ছোটগল্প- নাটক-পত্রসাহিত্য-জীবন-চরিত-রম্যরচনা। রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাবে বাংলার সাহিত্য জগতে নতুন যুগের সূচনা হোল। যেদিন তাঁর 'গীতাঞ্জলি' কাব্য 'নোবেল প্রাইজ' লাভ করল (১৯১৩ খ্রীঃ), সেদিন সারা পৃথিবীর লোক বিস্মিত হয়েছিল।
(ছ) বিচিত্র রচনা : শুধু গীতাঞ্জলির জন্যই তিন শ্রেষ্ঠ কবির সম্মান পান নি, 'মানসী','সোনার তরী', 'চিত্রা', 'খেয়া', 'পূরবী', 'মহুয়া', 'পুনশ্চ' প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থের অর্ন্তভুক্ত।'বিসর্জন', 'মালিনী', 'ডাকঘর', 'রাজা','অচলায়তন' প্রভৃতি নাটক; 'নৌকাডুবি', 'গোরা', 'চোখের বালি' প্রভৃতি উপন্যাস; বহু ছোটগল্প, অজস্র প্রবন্ধ ও পত্রসাহিত্য রচনা সম্ভারের কলেবর বৃদ্ধি করেছে।
(জ) প্রকৃতি প্রেম ও মানবপ্রীতি : রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রাণকে সর্বপ্রকারে সঞ্জীবিত করেছিল এই রূপ-রস-ভরা প্রকৃতি। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের যোগ কেবল একালের নয়, জন্মজন্মান্তরের-একথা রবীন্দ্রনাথের মত আর কোন কবি অনুভব করেন নি। তাঁর মত আর কোন কবি প্রকৃতির সঙ্গে এত নিবিড় একাত্মতা উপলব্ধি করেন নি। রবীন্দ্রনাথ দেবতাকে লক্ষ্য করলেন মানুষের মধ্যে। গাইলেন-'প্রিয়জনে যাহা দিই, তাহা দিই দেবতারে।'
(ঝ) স্বদেশ ভাবনা : রবীন্দ্রনাথ কেবল তাঁর কাব্যকুঞ্জে আপনার মধ্যে আপনি মগ্ন ছিলেন না। দুঃখ-দৈন্যে ভরা এ সংসারের দৈন্য যখনই তাঁর নজরে পড়েছে তখনই তিনি নেমে এসেছেন অসহায় মানুষের মধ্যে। যেখানে অন্যায়, যেখানে অমানুষিকতা, সেখানে তিনি শাসকের রক্তচক্ষুকেও উপেক্ষা করতেন। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের সংবাদ শুনে তিনি বৃটিশ সরকারের দেওয়া 'স্যার' উপাধি ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করেছিলেন।
(ঞ) উপসংহার : এমনই এক প্রতিভা সূর্য যেদিন মধ্যগগন থেকে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ল সেদিন কোন এক ইংরেজ মনীষী শোকবার্তা প্রেরণ করে বলেছিলেন- "The torch of the world passes away." রবীন্দ্রনাথ সশরীরে আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু আমাদের চিন্তা-ভাবনায়, ভাবুকতায়, মনে-মননে ও কল্পনায় তাঁর ভাবদেহটি মৃত্যুঞ্জয়। মৃত্যুর পরেও তিনি যে আমাদের মনের মধ্যে বেঁচে থাকতে চান-সেকথা তাঁরই ভাষায় স্মরণ করি -
"তখন কে বলে গো, সেই প্রভাতে নেই আমি
সকল খেলায় করব খেলা এই আমি
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।"
• এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় :
* কবিশ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রনাথ।
* বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ।
--------------------------------------------------
class 11 bengali rachana suggestion 2025 | class 11 rachana suggestion
আরো পড়ুন : একাদশ শ্রেণীর প্রবন্ধ রচনা সাজেশন 2025
রক্তদান জীবন দান
[প্রবন্ধ-সংকেত : ভূমিকা - মানবজীবনে রক্তের প্রয়োজনীয়তা - রক্ত সঞ্চালনের নিয়ম ও রক্তের বিভিন্ন গ্রুপ - রক্ত সংরক্ষণ - রক্তদান]
(ক) ভূমিকা : মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসাবে দানের স্বীকৃতিই সর্বজনবিদিত। মানব সভ্যতার ইতিহাসে তাই দাতাদের নাম অমর হয়ে আছে যাঁরা অর্থ, অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, বিদ্যা, পরিধেয় বস্ত্র, এমনকি নিজ জীবন অপরের জন্য দান করেছেন। বর্তমান যুগে রক্তদান মানুষের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রক্তদান প্রাণদানের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। অপরের জীবনের জন্য নিজের রক্তদান নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ দান।
(খ) মানবজীবনে রক্তের প্রয়োজনীয়তা : রক্ত মানব জীবনের অপরিহার্য উপাদান। এক কথায় রক্তকেই জীবন বলা যেতে পারে। দীর্ঘকাল রোগ ভোগের ফলে মানুষের শরীরে রক্তাল্পতা দেখা যেতে পারে, আবার দুর্ঘটনার ফলে অধিক রক্তক্ষরণের জন্যও শরীরে রক্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভাবে চিকিৎসকরা তখন অন্যের রক্ত সেই রোগীর শরীরে সঞ্চালনের ব্যবস্থা করে থাকেন। দেহে রক্তের চাহিদা পুনরায় পূরণ হওয়ায় রোগী নবজন্ম লাভ করেন, অপমৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পান।
(গ) রক্ত সঞ্চালনের নিয়ম ও রক্তের বিভিন্ন গ্রুপ : মানুষের শরীরের প্রয়োজনে মানবদেহের রক্তই সঞ্চালিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই রক্ত সঞ্চালনের কতকগুলি নিয়ম আছে। মানবদেহের রক্তের মূলত চারটি গ্রুপ A, B, AB এবং ০। প্রথমত অসুস্থ মানুষের রক্তের গ্রুপের সঙ্গে তার শরীরে যে রক্ত দেওয়া হবে তার গ্রুপের মিল হতে হবে। গ্রুপের অমিল হলে রোগীর ঘটবে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু। তবে গ্রুপের রক্ত অন্যান্য গ্রুপের রক্তের সঙ্গে মিশলেও কোনো ক্ষতি হয় না।
এক দেহের রক্ত অন্য দেহে সঞ্চালিত করা, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক যুগান্তরের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এর জন্য রক্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এক বিরাট সমস্যা। অন্যের প্রাণ বাঁচানোর জন্য রক্ত অনেকেই দিতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হল বাতাসের সংস্পর্শে এলেই রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। ১৯১৪ সালের বৈজ্ঞানিক Honstain রক্ত সংরক্ষণের এমন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যাতে বোতলে সংরক্ষিত রক্ত আর জমাট বাঁধতে পারে না। সেই রক্তের অবিকৃত থাকা নির্ভর করে তাপমাত্রা ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতার ওপর।
(ঘ) রক্ত সংরক্ষণ : পীড়িত মানুষের জন্য রক্তের চাহিদা খুবই বেশি, কিন্তু সে তুলনায় রক্তদাতার খুবই অভাব। অবশ্য আজকাল অনেক সভা, সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রক্তদানের কর্মসূচী নিচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে রক্তদানের একটি প্রবল স্পৃহা এজন্য দেখা দিচ্ছে। কিন্তু অনেক সময় সংরক্ষণ ব্যবস্থার অগ্রভুলতার জন্য দাতা থাকা সত্ত্বেও রক্ত নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিছু দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন হাসপাতাল গুলিতে নিয়মিত রক্ত দান করে থাকে। রক্তদানের প্রবণতা জনসাধারণের মধ্যে বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলিতেও Blood Bank গড়ে উঠেছে।
(ঙ) রক্তদান : যাদের শরীরে রক্ত বেশি, রক্ত দানের ফলে তাদের শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকে। কিছু কিছু মানুষের মনের ধারণা রক্ত দিলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু এই ভ্রান্ত ধারণা ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে দূর করা প্রয়োজন। রক্ত দানের মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হবে মানবসেবা, ঈশ্বর সেবা। হিন্দুর রক্ত মুসলমানের শরীরে, মুসলমানের রক্ত হিন্দুর, হিন্দুর রক্ত খ্রীষ্টানের-এভাবেই গড়ে উঠবে মানব প্রেমবন্ধন। প্রেমপ্রীতির মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে। মৃত্যুযন্ত্রণাকাতর মানুষের পাশে গভীর মমত্ববোধ নিয়ে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে- "জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।"
• এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় :
* রক্তদান একটি পবিত্র কর্তব্য।
* রক্তদান কয়েকটি কথা।
--------------------------------------------------
প্রবন্ধ রচনা Class 11 | ক্লাস 11 প্রবন্ধ রচনা | খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা
তোমার প্রিয় কবি
(কাজী নজরুল ইসলাম)
[প্রবন্ধ-সংকেত: ভূমিকা-নতুন সুর ও নতুন ভাষা- যৌবনের উপাসক-অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ-মানবতার জয়গান-উপসংহার।]
(ক) ভূমিকা : আমার প্রিয় কবি হিসাবে যাঁর নাম উল্লেখ করতে চাই, অনেকেই হয়তো তাঁর নাম শুনলে আপত্তি করবেন, কিন্তু তবুও তিনিই আমার প্রিয় কবি। আমার সেই একান্ত প্রিয় ও বরেণ্য কবি হলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম্।
(খ) নতুন সুর ও নতুন ভাষা : কোন্ সেই কান্ত-পদাবলীর কবি চন্ডীদাসের কাল হতে বাংলা সাহিত্যে করুণ রস, হা-হুতাশ, ক্রন্দন আর চোখের জলের প্লাবন বয়ে গেল। রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের পথানুসারী কবির দল যখন মিহি ও ললিত সুরের কাব্য গুঞ্জনে বিহ্বল তখন ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম্। কাব্য কাননে তিনি যে সুরের গান ধরলেন সে সুর মধুর ললিত আলস্যের সুর নয়, সে সুর ছিল বজ্রগম্ভীর নিনাদ। কবির সেই অগ্নিবীণার অগ্নিময় আহ্বান বাণী-
"বল বীর
চির উন্নত মম শির।"
কবির এ কবিতা যখন শুনি, তখন আচম্বিতে মনে হয়, কবির রাগিণী নতুন, ভাব নতুন, ছন্দ নতুন, ভাষা নতুন। তখনই এই বিদ্রোহী কবিকে মনে মনে অভিনন্দিত না করে পারি না।
(গ) যৌবনের উপাসক : নজরুলের কাব্যভাবনা হয়তো তত গভীর নয়, তাঁর কাব্যের ভাষা, ছন্দ সর্বত্র নিখুঁত ও সুন্দর নয়, কিন্তু তাঁর কাব্যে যে বলিষ্ঠতা ও তেজস্বিতা আছে, দৃপ্ত ভঙ্গিমার যে তেজ ফুটে উঠেছে, এমনটি আর কোন বাঙালী কবির কাব্যে আছে? নজরুলের মতো আর কোন্ কবি পাঠকের দেহে ও মনে যৌবনের উন্মত্ততা উত্তালতা জাগিয়ে তুলতে পারেন ?
(ঘ) অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ : কবি সদ্যজাগ্রত চোখ মেলে দেখেছিলেন সারা ভারত জুড়ে ইংরেজ-জাতির অকথ্য অত্যাচার, দেখেছিলেন সেই নির্যাতিতের ও নিপীড়িতের মর্মবেদনায় সমস্ত আকাশ বাতাস ব্যথিত হয়ে উঠেছে। কবি নজরুল সেই গভীর মর্মবেদনা সমগ্র হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে শান্ত নিরালায় বসে মধুর রাগিণী বাজাতে পারলেন না। আমাদের স্বাধীনতা যারা হরণ করেছে, আমাদের পদে পদে যারা লাঞ্ছিত করেছে, সেই স্বাধীনতা-হরণকারী ইংরেজ শাসকের বিচার ও শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত যেন কবির বিরাম নেই, শান্তি নেই। কবি ঘোষণা করলেন -
"আমি সেই দিন হব শান্ত-
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না।"
কবি নজরুল যদি বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত না হতেন, তবে এমন তেজোদৃপ্ত পৌরুষময় কণ্ঠে অসত্য ও অন্যায়ের প্রতিবিধানের জন্য অগ্নিময় ঘোষণা হয়তো শুনতে পেতাম না।
(ঙ) মানবতার জয়গান : সব কবিই মানুষকে ভালবাসেন, কিন্তু নজরুলের মতো কোন্ কবি অন্তরের সমস্ত স্নেহ-সুষমা উজাড় করে দিয়ে অসহায় মানুষকে এমন করে ভালোবেসেছেন? আর কোন্ কবি এমন স্পষ্ট ভাষায়, এত' মমতার সঙ্গে বলতে পেরেছেন-
"ক্ষুধাতুর শিশু চায়না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত একটু নুন।"
এমনি করেই কবি নজরুল দেশবাসীর মন জয় করলেন, জয় করলেন আমার মন।
(চ) উপসংহার : আমার কিশোর মন উদ্বেলিত করেছেন এই কবি। তাঁর কাব্য কত গভীর ও বিশাল তা জানি না, তবে এটুকু জানি বাংলার নরনারী এই সর্বহারার কবি, বিদ্রোহী মানবদরদী কবি ও সাম্যবাদী কবি নজরুলকে কখনও ভুলতে পারবে না।
• এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায়ঃ
* বাংলার শ্রেষ্ঠ বিদ্রোহী কবি।
* বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম্।
--------------------------------------------------
একাদশ শ্রেণীর প্রবন্ধ রচনা সাজেশন 2025 | প্রবন্ধ রচনা Class 11 | ক্লাস 11 প্রবন্ধ রচনা
আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা :
* এই বছর একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিষ্টার পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা গুলি হল -
1. বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য
2. বৃক্ষরোপণ / একটি গাছ একটি প্রাণ
3. দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান / প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান / বিজ্ঞান ও কুসংস্কার / বিজ্ঞানের আশীর্বাদ না অভিশাপ / বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল / বিজ্ঞানের ভালো মন্দ
4. তোমার জীবনের লক্ষ্য
5. পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার / দূষণ প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা / পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকা
6. বিশ্ব উষ্ণায়ন
7 .বাংলা উৎসব
8. চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা / খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ
9. একটি গাছের আত্মকথা
10. তোমার দেখা একটি মেলা / একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
11. রক্তদান জীবন দান
» লেখকের শেষ মন্তব্য :
উপরের সমস্ত প্রবন্ধ রচনাগুলি উওর একটি পর্বে বলে দেওয়া সম্ভব নয়, তাই দ্বিতীয় পর্বে বাকি প্রবন্ধ রচনা গুলির উত্তর বলে দিয়েছি। উপরের Menu Option এ ক্লিক করে দেখতে পারো। আমাদের এই পরিশ্রম আপনাদের কাজে লাগলে অবশ্যই Comment করে জানাতে ভুলবেন না।
• আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে Follow করো -
SOCIAL MEDIA | FOLLOW |
---|---|
Whatsapp Group | Click Here |
Telegram | Click Here |
শুভেচ্ছা সহ,
WB Semester Team