একাদশ শ্রেণির - বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা
• ভূমিকা : একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিষ্টার বাংলা বিষয়ে মোট 40 নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। এই 40 নম্বরের মধ্য 10 নম্বরের একটি প্রবন্ধ রচনা করতে হবে। পরীক্ষায় দুটি প্রবন্ধ রচনা দেওয়া থাকবে-একটি মানস-মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা করো এবং আর একটি বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা করো (যে কোনো একটি প্রবন্ধ রচনা করতে হবে)। আমি এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা নীচে উত্তর সহ বলে দিলাম -
- প্রথম পর্বে অনেকগুলো বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা উত্তর সহ বলে দিয়েছি। দেখতে হলে এখানে ক্লিক করো - Click Here
• প্রতিপক্ষের যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে স্বপক্ষে যুক্তিক্রম বিন্যাস করে প্রবন্ধ রচনা করো।
বিতর্কের বিষয় : 'ক্লাসরুম শিক্ষার পরিপূরক অনলাইন এডুকেশন'।
পক্ষে: 'অনলাইন এডুকেশন' হল দীর্ঘ বিদ্যালয় বিরতিতে ছাত্রছাত্রীদের গৃহবন্দি জীবনের একমাত্র মাধ্যম। এই ব্যবস্থার উৎসাহদাতা বা কার্যকারিতার কৃতিত্ব কিছুটা হলেও করোনা পরিস্থিতি। নার্সারি থেকে উচ্চতর শিক্ষা কার্যত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এই শিক্ষাপদ্ধতিতে। শহর তথা উচ্চবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে এই শিক্ষামাধ্যমের উপযোগিতা অপরিসীম।
বিপক্ষে: আর্থসামাজিক বৈষম্যের কারণে এই শিক্ষামাধ্যম দেশের গ্রাম্যজীবনের ক্ষেত্রে পরিপূরক নয়। শিক্ষকের কাছ থেকে যে অন্ধকার দূর হয় তার অভাব এই শিক্ষা পূরণ করতে পারে না। শিক্ষার মূলশর্ত থেকে 'অনলাইন' শিক্ষামাধ্যমে বিদ্যার্থীরা বঞ্চিত হবে। বিকাশের পথ ও লক্ষ্য পরিপূর্ণতা পাবে না।
উত্তর: বিপক্ষে: করোনা ভাইরাস আমাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করেছে মারাত্মকভাবে।এটা শিক্ষাক্ষেত্রও তার ব্যতিক্রম নয়। এই করোনা ভাইরাসের কারণে এক দীর্ঘসময় জুড়ে স্কুল-কলেজের দরজা বন্ধ থেকেছে। যার ফলে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে গৃহীত হয়েছে অনলাইন শিক্ষা। কিন্তু এই শিক্ষামাধ্যম আমার মতে কখনোই ক্লাসরুম শিক্ষার বিকল্প হতে পারে না।
প্রথমত, বর্তমানে ভারত সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ। তাই এই দেশে সকলের বাড়িতে অনলাইন শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ নাও হতে পারে। বস্তি এলাকার ছাত্রছাত্রী, এককামরার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা-তাদের পক্ষে পাঠগ্রহণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
দ্বিতীয়ত; অনগ্রসর শ্রেণীর বা পরিবারের ছেলেমেয়েদের কাছে 'অনলাইন এডুকেশন' উপযোগী হয়ে উঠবে না। কারন তাদের কাছে মোবাইল, ল্যাপটপের মতো ডিভাইস এমনকি ইনটারনেট সংযোগ থাকার ব্যবস্থা নেই। যার ফলে ধনী-দরিদ্র, গ্রাম-শহরের ব্যবধানকে আরও ব্যাপকমাত্রা দেবে এই অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা। তাই প্রযুক্তিনির্ভর এই শিক্ষাব্যবস্থা সকলের জন্য উপযোগী নয়।
তৃতীয়ত; শিক্ষক ও ছাত্রের আন্তঃসক্রিয়তায় যে শিক্ষা জীবন্ত হয়ে ওঠে, প্রশ্নোত্তরের মধ্য দিয়ে যে শিক্ষার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়-অনলাইন শিক্ষায় তা অনুপস্থিত। শিক্ষক ও ছাত্র দুজনেই যেন যান্ত্রিক এবং নৈর্ব্যক্তিক ভূমিকা পালন করে থাকে।
চতুর্থত; ক্রমশ স্বার্থপর হয়ে ওঠা আজকের সমাজে অনলাইন শিক্ষা আরও বেশি করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক মানসিকতার জন্ম দেবে। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা, ক্লাসরুম শিক্ষায় যে সামাজিকতার শিক্ষা দেয় তা থেকে বঞ্চিত হবে শিশু-কিশোর মন।
পঞ্চমত; অনলাইন শিক্ষা শিক্ষাপ্রক্রিয়াকে যান্ত্রিক করে তোলে। অজস্র তথ্যের বিনিময়, ডাউনলোড করা শিক্ষা উপকরণের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে এই শিক্ষাব্যবস্থা। যে বিমূর্ত ধারণা, নান্দনিকবোধ, অনুভূতি ও সংবেদনশীলতা ক্লাসরুম শিক্ষায় সহজলভ্য-অনলাইন শিক্ষায় তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
তাই শিক্ষাকে যদি জীবন্ত করে তুলতে হয় বা শিক্ষায় যদি সকলের অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হয়, তাহলে অনলাইন শিক্ষা নয় শ্রেণীকক্ষের শিক্ষাই একমাত্র উপায়।
----------------------------------------------
class 11 bitarkamulak prabandha rachana | class11 bitarkamulak rachana
আরো পড়ুন : একাদশ শ্রেণীর প্রবন্ধ রচনা সাজেশন 2025
বিতর্কের বিষয়: 'পাস-ফেল তুলে দেওয়া এক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত'।
পক্ষে: "শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে মুক্তি।" একদা দেওয়ালের গায়ে বহু উচ্চারিত একটি স্লোগান ছিল এটি। স্বাধীনতার পরে এতগুলি দশক পার করেও কী এই স্লোগানের প্রয়োজনীয়তা? আজও যখন রাজস্থানে 'সতী' হয়, এখানে-ওখানে ডাইনি সন্দেহে নিরীহ মহিলাদের পিটিয়ে মারা হয়, নাবালিকা মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়-তখনই বোঝা যায় শিক্ষার প্রয়োজন কতটা। কিন্তু ভারতের মতো বিরাট জনসংখ্যার দেশে বিষয়টা সহজসাধ্য নয়। একটি সমীক্ষা বলছে, ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে এই দেশে প্রথম শ্রেণিতে ভরতি হয়েছিল ২ কোটি ৭০ লক্ষ ছেলেমেয়ে। কিন্তু ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে তারা যখন দশম শ্রেণিতে পৌঁছোয় তাদের সংখ্যা হয় ১ কোটি। অর্থাৎ প্রায় ৬৩ শতাংশ ছেলেমেয়েই স্কুল ছেড়ে দিয়েছে ন্যূনতম শিক্ষা অর্জনের আগেই। এদের বেশিরভাগই স্কুল ছাড়ছে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির মধ্যে, আর-একটি বড়ো অংশ অষ্টম থেকে দশম শ্রেণিতে। কেন এই স্কুলত্যাগ ? অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা নিঃসন্দেহে পাঠক্রমের গুরুভার আর পরীক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে ভীতি। প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় তীব্র চাপের মুখোমুখি হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এর থেকে মুক্তির একমাত্র পথ পাস-ফেল ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়া। তা ছাড়া আলাদা-আলাদা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে আসা ছেলেমেয়েদের পারস্পরিক প্রতিযোগিতা অসম হতে বাধ্য। যে উপযুক্ত পরিবেশ এবং সাহায্য একটি শিক্ষিত বা অর্থবান পরিবারের ছেলেরা বা মেয়েরা পায় তা কোনো গরিব বাড়ির ছেলেমেয়ের পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়। অথচ পাস-ফেলের প্রতিযোগিতায় তাদের একই সারিতে বসিয়ে দেওয়া হয়। এটা অন্যায় এবং অমানবিক। পাস-ফেল প্রথা তুলে দিয়ে গ্রেড সিস্টেম চালু করা তাই শিক্ষাকে মানবিক করে। ২০০২-এ ৮৬তম সংবিধান সংশোধন করে ২১-এ অনুচ্ছেদে ৬-১৪ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আর তাকে কার্যকরী করতেই ২০১০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে চালু হয়েছে "The Right of Children Free and Compulsory Education (RTE) Act 2009"। পাস- ফেল ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার মাধ্যমেই শিক্ষার সর্বজনীন বিস্তার সম্ভব।
উত্তর বিপক্ষে: পরীক্ষায় পাস-ফেল ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়ার একটাই অর্থ শিক্ষাকে সবার জন্য সহজ-সরল করে দেওয়া। এই বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তথ্য ও বক্তব্যের যে মিশেল এখানে পরিবেশিত হল সেখানে বেশ কিছু প্রশ্ন কিন্তু অমীমাংসিত থেকে গেল।
প্রথমত; পরীক্ষার পাস-ফেলহীন শিক্ষাব্যবস্থায় মূল্যায়ন পদ্ধতি তার তাৎপর্য হারাতে বাধ্য। যেখানে শিক্ষার্থীর সেরাটা বের করার সুযোগ নেই, সেখানে মূল্যায়নও তাৎপর্যহীন হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত; পরীক্ষায় পাস-ফেল থাকলে ছাত্রছাত্রীদের মনে শৈশব থেকেই এক প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়। যার ফলে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করবে।
তৃতীয়ত; পরীক্ষায় পাস-ফেল না থাকলে ছাত্রছাত্রীদেরা মধ্যে শিক্ষার প্রতি অবহেলা করবে। কারন তারা আগের থেকে জেনে যাবে-ফেল করলেও পরের শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হতে কেও ঠেকাবে না। যার ফলে সচেতন পরিবার ছাড়া অন্যান্য পরবারের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারবে না।
চতুর্থত; পরীক্ষায় পাস-ফেল ব্যবস্থা তুলে দিলে ছাত্রছাত্রীদের মনে পরীক্ষার ভয় দূর হয়ে হবে। যার ফলে স্কুলগুলোতে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে থাকবে। এ তো আকাশকুসুম কল্পনা মাত্র। সকালে যে কিশোরকে বাবাকে চাষের কাজে সাহায্য করতে মাঠে যেতে হয় বা প্রাণপণে রিকশা চালাতে চালাতে হাঁফিয়ে-ওঠা যে ছেলেটা মুক্তির ঘুড়ি খোঁজে-পরীক্ষার পাস-ফেলে তার কী আসে যায়? সে জীবনের পাস-ফেল নিয়েই শুধু ভাবতে শিখেছে।
পঞ্চমত; স্কুলগুলিতে পরীক্ষার পাস-ফেল ব্যবস্থা তুলে দিলে শিক্ষার মান পতন ঘটবে। ফলে তৈরি হবে সামগ্রিক শিক্ষার সংকট। যা দেশের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করবে।
ষষ্ঠত; শিক্ষার অধিকার আইনের কথা শোনালেন বিপক্ষ দলের বন্ধুরা। অথচ সেই আইনেই তো বলা হয়েছে শিক্ষার 'Satisfactory and equitable quality'র কথা, পাস-ফেল তুলে দিলে শিক্ষার সেই গুণগত মান বজায় রাখা অসম্ভব। সম্প্রতি পার্লামেন্টের স্থায়ী কমিটিও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
সপ্তমত; গ্রাম-শহর, শিক্ষিত-অশিক্ষিতের ব্যবধান আজও আমাদের দেশে ঘোচেনি। সেক্ষেত্রে মূল্যায়নের গুরুত্ব বুঝে সারা বছর শিক্ষার্থীর পরিচর্যা করা, এ দেশে সামগ্রিকভাবে কতটা সম্ভব সে প্রশ্নও স্বাভাবিক।
----------------------------------------------
bitarkamulak prabandha rachana Class 11 | বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা Class 11
বিতর্কের বিষয় : 'বিজ্ঞানের এই যুগে সাহিত্য একটি অপ্রয়োজনীয় বিষয়'।
পক্ষে: বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। তাই বর্তমানে মানুষ বিজ্ঞানের দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত। সুতরাং ছাত্র-ছাত্রীরা যদি বই ফেলে কম্পিউটারের কি বোর্ড এ হাত রাখে তা দোষের কারণ হতে পারে না। বিভূতিভূষণের 'পথের পাঁচালি'র থেকে ক্যালকুলাস তার কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। 'চাঁদের পাহাড়'। ওটা না হয় কিছু সময় খরচ করে সিনেমাতেই দেখে নেওয়া যাবে, উপন্যাসের থেকে অনেক কম সময়ে। প্রতিটি ছেলেমেয়েকে এখন প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে দৌড়োতে হচ্ছে। বিজ্ঞানেই তো চাকরির সুযোগ সবথেকে বেশি। অজস্র শাখায় অজস্র সম্ভাবনা। না হলে অর্থবিদ্যা, ইতিহাসও চলতে পারে। কিন্তু সাহিত্য। শিক্ষকতার পেশা ছাড়া সাহিত্যে চাকরির সুযোগ কোথায়? তাহলে হাতে থাকল পেনসিল। সাহিত্য অবসর বিনোদনের জন্য সঠিক উপায়। কিন্তু অবসরই যখন নেই, সাহিত্যও প্রয়োজনহীন। একটা সময়ে বাঙালির কৈশোরে-যৌবনে অবশ্য পালনীয় বিষয় ছিল কবিতাচর্চা। কজন বড়ো কবিকে পেল এই বাংলা দেশ? তারাই বা কবিতা লিখে আর লিটল ম্যাগাজিন করে কী মোক্ষলাভ করল? সুতরাং কেরিয়ার-নির্ভর পড়াশোনায় জোর দিতে হবে। এটাই যুগধর্ম। আর সেখানে সাহিত্যের বিশেষ জায়গা নেই। এরপরেও কারুর বিশেষ সাহিত্য অনুরাগ থাকতেই পারে, কিন্তু তার চর্চা হোক পড়াশোনার পরে, কর্মজীবনে প্রবেশের পরে। সাহিত্যের ক্ষেত্রে কল্পনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এই কল্পনাপ্রবণতা আজকের যুক্তিনিষ্ঠ গতিশীল জীবনের সঙ্গে খাপ খায় না। সর্বোপরি বিজ্ঞানের সঙ্গে জীবনের যোগ অনেক প্রত্যক্ষ হওয়ায় মানুষের সাহায্যার্থে বিজ্ঞান অনেক বেশি কার্যকরী। মানবজীবনে সাহিত্যের কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। তাই নতুন যুগের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সাহিত্য আর ততটা প্রয়োজনীয় নয়।
উত্তর: বিপক্ষে: প্রথমত; সাহিত্য সত্য ও সুন্দরের সন্ধান দেয়। এর অস্তিত্ব না থাকলে মানবসমাজে মনুষ্যত্বের বিপর্যয় ঘটবে। আপনারাই সমাজে একদিকে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কথা বলবেন, অন্যদিকে সাহিতাকে অপ্রয়োজনীয় বলবেন-এ তো ভয়ংকর স্ববিরোধিতা।
দ্বিতীয়ত; বিশেষভাবে ছাত্রদের জন্য সাহিত্যপাঠ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাদের সুস্থরুচিবোধ গড়ে তুলতে সাহিত্যই প্রধান সঙ্গী হতে পারে। দেশ- বিদেশের লেখা তাদের চেতনা আর অনুভূতির দিগন্তকে খুলে দেবে। কল্পনার জাগরণ তাদের সৃজনশীলতাকে নিশ্চিত করবে। পৃথিবীর বড়ো বড়ো বিজ্ঞানীরা আসলে এক-একজন বড়ো কবি- এটা মেনে নিতে আপনাদের অসুবিধা থাকার কথা নয়।
তৃতীয়ত; আমাদের জীবনে সাহিত্যের কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা না থাকার কথা বলেছেন বন্ধু। কিন্তু প্রত্যক্ষ ভূমিকাই তো জীবনের সব নয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা যা আমরা মনের মধ্যে বহন করে চলি, তারও তো কোনো প্রত্যক্ষতা নেই। সাহিত্য আদর্শবাদের সন্ধান দেয়, ভেঙে-পড়া মনকে সাহস জোগায়। কল্পনা করুন এমন একটা পৃথিবী যেখানে শেকস্পিয়র প্রয়োজনহীন, রবীন্দ্রনাথ অদৃশ্য-সে পৃথিবী আমাদের জন্য সুখের হবে তো? তাই বিজ্ঞানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নয়, বিজ্ঞান আর সাহিত্যের সমন্বয়েই তৈরি হোক নতুন মানুষ, নতুন সমাজ।
চতুর্থত; বিজ্ঞান বিষয়ে চাকরির সুযোগ বেশি, অতএব সাহিত্য অপ্রয়োজনীয় -এটাও কোনো যুক্তি নয়। প্রথমত, পাঠক্রমের একটি বিষয় নিয়ে ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা নেয়, চাকরির লক্ষ্যে। কিন্তু সঙ্গে থাকে আরও অনেকগুলি বিষয়। এগুলোর মধ্যে সাহিত্য থাকলে অসুবিধা কোথায়? দ্বিতীয়ত, সাহিত্যেও আজকাল নানারকম চাকরির সুযোগ` আছে। শিক্ষকতা ছাড়াও সাংবাদিকতা কিংবা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সাহিত্যের ছাত্ররা জায়গা করে নিতে পারে।
পঞ্চমত; প্রথমত 'বিজ্ঞানের যুগ' কথাটার অর্থ কী? এ যুগে সাহিত্য, চিত্রকলা, নাটক, গান, সিনেমা-এসব কিছুই নেই? মানবজাতির অগ্রগতিতে বা সংগঠনে এসবের কোনো ভূমিকাই নেই? এভাবে বিজ্ঞানকেই তো অপমান করছেন আপনারা।
ষষ্ঠত; একজন সাহিত্যিক মূলত হৃদয়ের কারবারি। সাহিত্যকে বাদ দিলে যন্ত্রসভ্যতার যুগে মানুষ রোবট হয়ে যাবে। বিজ্ঞান মগজের বিষয়, সাহিত্য হৃদয়ের। তাহলে দুয়ের মধ্যে সংঘাতের তো কোনো জায়গাই নেই। সাহিত্য আর বিজ্ঞান মিলেই তো সম্পূর্ণ মানুষ তৈরি হয়। এই অবস্থায় ছাত্রজীবনে সাহিত্যের রসাস্বাদনকে যদি কেউ সময়ের অপচয় মনে করেন তাহলে তাঁর সত্যনিষ্ঠা নিয়েই সন্দেহ থাকে। কী- বোর্ডে হাত রাখা ছেলেটির ব্যাগের মধ্যে 'পথের পাঁচালি'ও থাকুক- এটাই আধুনিক সভ্যতায় কাঙ্ক্ষিত।
সপ্তমত; অতি বিজ্ঞানপন্থীরা মনে করেন লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করা নাকি অর্থহীন। অর্থ বা প্রতিষ্ঠা কোনোটাই এর দ্বারা পাওয়া যায় না। এঁদের উদ্দেশে সবিনয়ে বলতে চাই, আপনারা নিজেদের জীবনকে বড়োবাজারের দোকান করে তুলবেন না। জীবনের সার্থকতা টিভি, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিনেই সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে যেমন সকলে বিখ্যাত হয় না, তেমনি কবিতা লিখেও সকলে বিখ্যাত হবে, এমনটাও নয়। একজন রবীন্দ্রনাথের জন্য আমাদের কয়েক শতাব্দী অপেক্ষা করে থাকতে হয়। প্রতিষ্ঠা পাওয়া কঠিন, কিন্তু কবিরা কি প্রতিষ্ঠার জন্য কবিতা লেখেন? কলমের শক্তি যে তরবারির থেকে বেশি তা ভুলে গেলেন ?
----------------------------------------------
একাদশ শ্রেণির - বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা | Bitarkamulak Rachana Class 11
- প্রথম পর্বে অনেকগুলো বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা উত্তর সহ বলে দিয়েছি। দেখতে হলে এখানে ক্লিক করো - Click Here
লেখকের শেষ মতামত :
উপরের সমস্ত বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা গুলি একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় সেমিস্টার বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই লেখাগুলো যদি আপনাদের কাজে লাগে তাহলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। লেখাগুলো আপনাদের কেমন লাগছে অবশ্যই Comment বক্সে Comment করে জানাবেন।
আরো পড়ুন | Link |
---|---|
1. ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু | Click Here |
2. একাদশ শ্রেণির নতুন ইংরেজি সিলেবাস | Click Here |
4. ছুটি - গল্পের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Click Here |
• আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে Follow করো -
SOCIAL MEDIA | FOLLOW |
---|---|
Whatsapp Group | Click Here |
Telegram | Click Here |
• Comment করো :
Thank You !