'লালন শাহ ফকিরের গান' - লালন শাহ্
• ভূমিকা :
একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিষ্টার বাংলা পরীক্ষার জন্য পাঠ্য তিনটি কবিতা পড়তে হবে - বিদ্যাপতির লেখা 'ভাব সম্মিলন', লালন শাহের লেখা 'লালন শাহ্ ফকিরের গান', এবং জয় গোস্বামীর লেখা 'নুন' কবিতা। উপরের তিনটি কবিতা থেকে বাংলা পরীক্ষায় 5 নম্বরের দুটি বড়ো প্রশ্ন আসবে। তার মধ্যে যে কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। কিন্তু এই 5 নম্বরের বড়ো প্রশ্নটি ২+৩ অথবা ৩+২ আকারে থাকবে। আমি আজকের এই লেখাতে Class 11 Second Semester বাংলা পরীক্ষার জন্য লালন শাহের লেখা 'লালন শাহ্ ফকিরের গান' কবিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। চলো শুরু করি -
• 'লালন শাহ ফকিরের গান' কবিতার লেখক পরিচিতি :
লালন শাহ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। কারণ তিনি একাধারে সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক ও মানবতাবাদী। একটি মত অনুসারে, লালন শাহ ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের নদীয়া জেলার ভাঁড়ারা গ্রাম জন্মগ্রহণ করেন। আবার অন্য মতানুসারে, লালন সহ ছিলেন যশোহর জেলার ফুলবাড়ি গ্রামের এক মুসলমান পরিবারের সন্তান। তাঁর জন্ম নিয়ে বিভিন্ন পন্ডিতের বিভিন্ন মত-বিরোধ রয়েছে। তিনি বাংলার বাউল গানের শ্রেষ্ঠ রচয়িতা ছিলেন। তার গানে গ্রাম বাংলার মধ্যে সহজ সরল সুরে মানবতার জয়গান শোনা যায়।
• 'লালন শাহ ফকিরের গান' কবিতার উৎস :
ড. মতিলাল দাস এবং শ্রী পীযূষকান্তি মহাপাত্র সম্পাদিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত 'লালন গীতিকা' (১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ) নামক লালনের গানের সংকলন থেকে 'লালন শাহ্ ফকিরের গান'-টি নেওয়া হয়েছে। 'লালন গীতিকা' সংকলন গ্রন্থের ৩৯১ নম্বর গান হল 'লালন শাহ ফকিরের গান'।
• লালন শাহের লেখা 'লালন শাহ ফকিরের গান' কবিতাটি হল -
লালন শাহ ফকিরের গান
লালন শাহ
" মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি
মানুষ ছেড়ে ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি।।
দ্বি-দলের মৃণালে
সোনার মানুষ উজ্জ্বলে
মানুষ-গুরু কৃপা হ'লে
জানতে পাবি।।
এই মানুষে মানুষ গাথা
দেখ্না যেমন আলেক লতা
জেনে শুনে মুড়াও মাথা
জাতে তরবি।।
মানুষ ছাড়া মন আমার
পড়বি রে তুই শুন্যকার
লালন বলে, মানুষ-আকার
ভজলে তরবি।।"
লালন-গীতিকা (৩৯১-পদসংখ্যা)
class 11 lalon shah fakirer gan
• 'লালন শাহ ফকিরের গান' কবিতাটি লাইন ধরে ধরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা :
" মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি
মানুষ ছেড়ে ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি।।
ব্যাখ্যা : মানুষ ভজনা করলে সোনার মানুষ হওয়া যায়। অর্থাৎ খাঁটি বা শুদ্ধ মানুষ হতে গেলে মানুষের ভোজনা করতে হবে। মন থেকে মনুষত্ব। মানুষের মধ্যেই শক্তি-ভক্তি। আর মানুষের মনের মধ্যেই ঈশ্বরের অবস্থান। তাই লালন ফকির মানুষকে ভজনা করতে বলেছেন। আবার বলেছেন ক্ষ্যাপা তুই মানুষকে ছেড়ে দিলে তোমার মনুষত্ব হারিয়ে যাবে, তাই মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হলে মনের মানুষ এর সন্ধান পাওয়া যাবে না। " দ্বি-দলের মৃণালে
সোনার মানুষ উজ্জ্বলে
মানুষ-গুরু কৃপা হ'লে
জানতে পাবি।।"
ব্যাখ্যা : দুই দলের কল্পিত পদ্মে সোনার মানুষ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে অর্থাৎ দ্বি-দল প্রস্ফুটিত হয় আজ্ঞাচক্রে। আর সেই দ্বি-দলের পদ্মে সোনার মানুষ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আমাদের দুটি ভ্রু-র মাঝে তার অবস্থান যা আমাদের চেতনাকে জাগ্রত করে আর একমাত্র গুরুর কৃপা হলেই এই সত্য জানা সম্ভব। অন্যথা সম্ভব নয়। "এই মানুষে মানুষ গাথা
দেখ্না যেমন আলেক লতা
জেনে শুনে মুড়াও মাথা
জাতে তরবি।।"
ব্যাখ্যা : এখানে লালন ফকির বলেছেন - মানুষের মধ্যেই মানুষের গাথা বা কাহিনী রচিত হয়ে আছে আলেক লতার মতো। অর্থাৎ পার্থিব মানব বা মানুষ শরীরের মধ্যেই বিরাজ করেন "মনের মানুষ বা সহজ মানুষ"। ঠিক যেমন লতা গাছের অলক্ষে বা দৃশ্যমানতার আড়ালে থাকে। আর বলেছেন - মাথা মোড়ালেই জাত ওঠে যায় না। এই সব কিছু জেনেও যে মাথা মোড়াই বা মুণ্ডিতমস্তক হয়, সে আসলে জাত-কে অবলম্বন করে মুক্তি খোঁজে।
" মানুষ ছাড়া মন আমার
পড়বি রে তুই শুন্যকার
লালন বলে, মানুষ-আকার
ভজলে তরবি।।"
ব্যাখ্যা : মানুষকে ছেড়ে অন্য স্থানে ঈশ্বর সন্ধান করলে শূন্যতাবোধ অনুভব করবে। কারণ মানুষের সঙ্গসুখ ছাড়া মানুষের মন অর্থহীন এবং মহাশূন্য। তাই 'লালন শাহ ফকিরের গান' কবিতার শেষে লালন শাহ বলেছেন - মানুষকে ভজনা করলেই একমাত্র ত্রাণ বা মুক্তি পাওয়া যাবে।
• ' লালন শাহ ফকিরের গান' কবিতার শব্দার্থ ও টীকা :
ভজলে : ভজনা বা উপাসনা করলে, সোনার মানুষ : শুদ্ধ মানুষ, ক্ষ্যাপা : পাগল , মূল : আসল অর্থাৎ মনের মানুষ, দ্বি-দল : দুই দল বা অক্ষর - 'হ' এবং 'ক্ষ'। হ হৃদয়ের প্রতীক আর ক্ষ ক্ষণ বা মুহূর্তের প্রতীক, মৃণাল : পদ্ম, উজ্জ্বল : চকচকে, কৃপা : করুণা বা দয়া, আলেক : অলক্ষে, মুড়াও : মুন্ডন করা বা ন্যাড়া করা, শূন্যকার : নিরাকার বা আকার বিহীন, তরবি : ত্রাণ পাবি।
ভজলে : ভজনা বা উপাসনা করলে, সোনার মানুষ : শুদ্ধ মানুষ, ক্ষ্যাপা : পাগল , মূল : আসল অর্থাৎ মনের মানুষ, দ্বি-দল : দুই দল বা অক্ষর - 'হ' এবং 'ক্ষ'। হ হৃদয়ের প্রতীক আর ক্ষ ক্ষণ বা মুহূর্তের প্রতীক, মৃণাল : পদ্ম, উজ্জ্বল : চকচকে, কৃপা : করুণা বা দয়া, আলেক : অলক্ষে, মুড়াও : মুন্ডন করা বা ন্যাড়া করা, শূন্যকার : নিরাকার বা আকার বিহীন, তরবি : ত্রাণ পাবি।
লালন শাহ্ ফকিরের গান class 11
• লালন শাহ ফকিরের গান কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব :
লালন শাহের লেখা 'লালন শাহ ফকিরের গান' কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর একটি পর্বে বা পোষ্টে লেখা সম্ভব নয়, তাই সমস্ত প্রশ্ন ও উত্তর দ্বিতীয় পর্বে দেওয়া আছে। 'লালন শাহ ফকিরের গান' কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর পেতে Menu Option এ ক্লিক করতে দেখতে পারো।
আরো পড়ুন | Link |
---|---|
1. ভাবসম্মিলন কবিতার বিষয়বস্তু | Click Here |
2. ভাবসম্মিলন - কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Click Here |
4. ছুটি - গল্পের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Click Here |
5. একাদশ শ্রেণির নতুন বাংলা প্রশ্নপত্র | Click Here |
SOCIAL MEDIA | FOLLOW |
---|---|
Whatsapp Group | Click Here |
Telegram | Click Here |
# শেষ কথা :
আমাদের wbsemester.com Website এ WBCHSE Board এর নতুন নিয়ম অনুসারে Class 11 Semester 1, Class 11 Semester 2 , Class 12 Semester 3, Class 11 Semester 4 এর সমস্ত নোটস, সাজেসন, প্রজেক্ট সহ সম্পূর্ণ Free তে পেয়ে যাবে। কেমন লেগেছে Comment করো।
Thank You !
Sir প্রশ্ন গুলি দিন
উত্তরমুছুন