'ছুটি' গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর
• ভূমিকা :
তোমরা জানো যে WBCHSE Board এর নতুন নিয়ম অনুসারে Class 11 Semester 2 Bengali বা বাংলা বিষয়ে দুটি গল্প পড়তে হবে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ছুটি' গল্প এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' গল্প । একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিষ্টার বাংলা বিষয়ে মোট 40 নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। এই 40 নম্বরের মধ্যে উপরের দুটি গল্প থেকে দুটি বড়ো 5 নম্বরের প্রশ্ন আসবে Class 11 Semester 2 Bengali পরীক্ষায়। তার মধ্যে তোমাকে 5 নম্বরের একটি প্রশ্ন করতে হবে। আজকের এই লেখাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'ছুটি' গল্প থেকে যে বড়ো প্রশ্নগুলি Class 11 Second Semester Bengali পরীক্ষায় বারবার আসে। সেই বড়ো প্রশ্নগুলির উত্তরসহ নীচে বলে দিলাম।
Class 11 Chuti Golpo Question Answer
1) 'ছুটি' গল্প অবলম্বনে ফটিক চরিত্রটি সম্পর্কে আলোচনা করো অথবা 'ছুটি' গল্পে ফটিক চরিত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। ✓
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের 'ছুটি' গল্প থেকে উক্ত প্রশ্নটি এসেছে। এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিক। এখন আমি নীচে ফটিক চরিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি -
(ক) শিশুসুলভ চপলতা : ফটিক ছিলেন নির্বোধ, অমনোযোগী ও দুরন্ত স্বভাবের । কারণ প্রকান্ড শালকাঠের গুঁড়ি গড়িয়ে খেলা কিংবা ছোটোভাই মাখন গুঁড়ির ওপরে বসলে সেই সুদ্ধ গড়িয়ে দেওয়া, এই সমস্ত পরিকল্পনাই ফটিক করে, বাকিরা শুধু তা অনুমোদন এবং কার্যকর করে। ফটিকের মা ফটিকের এই দুরন্তপনাকে 'অবাধ্য উচ্ছৃঙ্খলতা' বলে উল্লেখ করেছেন।
(খ)বিবেকবোধ: ফটিককে 'নির্বোধ ও অমনোযোগী' হিসেবে ভাবা হলেও ফটিকের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধের যথেষ্ট প্রকাশ ঘটেছে। স্কুলে বই হারিয়ে ফেলার পরে যখন মামি তাকে তিরস্কার করেন, তখন পরের পয়সা নষ্ট করছে, এই অনুভবে ফটিকের মধ্যে তৈরি হওয়া 'হীনতা এবং দৈন্য'-এর অনুভব তাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। বিবেকবোধ থেকেই অসুস্থ ফটিক মামির কাছে 'অনাবশ্যক জ্বালাতন' হতে চায় না বলে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়।
(গ) শিকড়ের প্রতি টান : ফটিক মামার সঙ্গে কলকাতা গেলেও গ্রামের প্রতি টান ছিল। প্রকাণ্ড একটা ঘুড়ি নিয়ে ছুটে বেড়ানো গ্রামের সেই মাঠ, মনের আনন্দে নৃত্যপর হয়ে ঘুরে বেড়ানোর সেই নদীতীর, যখন-তখন ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটার সেই সংকীর্ণ স্রোতস্বিনী, আর তার সঙ্গীসাথিদের নিয়ে স্বাধীনতার উদ্যাপন-এইসব পুরোনো স্মৃতি তার মনখারাপের জন্ম দেয়।
(ঘ) মা-এর প্রতি টান : ফটিক মনের আনন্দে কলকাতায় মামার বাড়িতে এলেও কলকাতায় অবস্থানকালে মা-র সঙ্গে বিচ্ছেদে সে কাতর হয়ে পড়ে। কারণ গল্প দেখা গেছে ফটিক অসুস্থ হওয়ার পরে মায়ের সেবা-ই ফটিকের কাছে একমাত্র আকাঙ্ক্ষিত মনে হয়। মা-র কাছে যাওয়ার জন্যই সে কাউকে না বলে মামার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
উপসংহার : আলোচ্য আলোচনা পর বলতে পারি একলা শহরজীবনে বিচ্ছিন্ন ফটিক তার মঘর কাছে ছুটির সন্ধান করেছিল। গল্পের শেষে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সে অনন্ত ছুটির দেশের সন্ধান পেয়েছে ।
----------------------------------------------------------------
2) "মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”- কে, কাকে উদ্দেশ করে কথাটি বলেছে ? ছুটির জন্য বক্তার এই আকুলতার কারণ কী ছিল ? শেষপর্যন্ত বক্তা তার কাঙ্ক্ষিত ছুটি কীভাবে পেয়েছিল ?
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের 'ছুটি' গল্প থেকে উক্ত প্রশ্নটি এসেছে। এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিক। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিক তার মা-কে উদ্দেশ করে বলেছে।
• ফটিক এর আকুলতা কারণ : ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে কলকাতায় পড়াশোনার জন্য নিয়ে গেলেও একদিকে মামার বাড়িতে মামির অনাদর, অন্যদিকে শহরের বদ্ধ জীবন ফটিককে কখনোই পড়াশোনায় আকৃষ্ট করতে পারেনি। ফলে স্কুলে সে 'নির্বোধ এবং অমনোযোগী' হিসেবে চিহ্নিত হয়। মাস্টারমশাই তাকে পড়া না পারার জন্য মারতেন, এমনকি তার মামাতো ভাইরা পর্যন্ত তার সঙ্গ এড়িয়ে চলা পছন্দ করত। ঘরে এবং বাইরে এত অনাদর এবং উপেক্ষার মধ্যে থাকতে থাকতেই ফটিকের মা-র কাছে যাওয়ার ইচ্ছা হত। তার মামা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে কার্তিক মাসে পুজোর ছুটির সময় সে বাড়ি যাবে। তখন থেকেই শুরু হয় ছুটির জন্য ফটিকের অধীর অপেক্ষা।
• ফটিক যেভাবে ছুটি পেল : অসুস্থ হওয়ার পরে ফটিক নিজেই নিজের ছুটি করে নিতে চেয়েছিল, কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে। কিন্তু মামার উদ্যোগে পুলিশের গাড়ি তাকে ফিরিয়ে আনে। নশ্বর জীবনে যে ছুটি ফটিক চেয়েছিল সে তা পায়নি, কিন্তু মৃত্যু তাকে সেই ছুটির সুযোগ করে দিয়েছে। ছুটিতে সে তার মার কাছে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু সফল হয়নি। সেই মা-কে পাশে রেখেই ফটিক যাত্রা করেছে অনন্ত ছুটির দেশে।
ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Class 11
3) 'পূর্বাপেক্ষা আর একটা ভালো খেলা মাথায় উদয় হইয়াছে; তাহাতে আর একটু বেশী মজা আছে'-বাক্যটি কোথা থেকে গৃহীত হয়েছে ? পূর্বের খেলাটি কি ছিল ? বর্তমান খেলাটি কার প্রস্তাব ছিল ? উহার পরিণতি কি হলো ?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথের রচিত 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের 'ছুটি' গল্প থেকে উপরোক্ত বাক্যটি গৃহীত হয়েছে।
• পূর্বের খেলাটি নিম্নরূপ : ফটিক চক্রবর্তী ছিল গ্রাম্য দুরন্তপনা বালকদের সর্দার। তারা নদীর ধারে খেলা করত। একদিন তারা দেখতে পেল নদীর ধারে একটা প্রকান্ড শালকাঠের গুঁড়ি যা দিয়ে মাস্তুল তৈরী হবে। সেটাকে সকলে একসাথে গড়িয়ে খেলা করবে। যার কাঠ তাকে উপেক্ষা করেই সকলের অনুমোদনে কোমর বেঁধে সেই খেলায় অগ্রসর হলো। কিন্তু ফটিকের ছোট্ট ভাই মাখনের বাধায় উক্ত খেলা পরিত্যাগ করতে হয়।
• বর্তমান খেলাটির প্রস্তাব : নূতন খেলাটির প্রস্তাব আসে ফটিকের কাছ থেকে। পূর্বের খেলাটি চালু রাখতে ফটিকের সব চেষ্টাই যখন বিফল হয় তখন ফটিকের মনে উদয় হয় আরেকটি মজার খেলা। ঠিক হলো মাখনকে সমেত ঐ কাঠ গড়াতে হবে। সকলে মিলে 'মার ঠেলা হেঁইয়ো' বলে মাখন সহ ঐ গুঁড়িটাকে গড়াতে আরম্ভ করলে মাখন মাটিতে পড়ে যায়। খেলাটির শুরুতেই সমাপ্তি হয়।
পরিণতি : বর্তমান খেলাটির শুরুতেই সমাপ্তিতে সকলেই রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। কিন্তু মাখনের মনে বিপরীত ক্রিয়া দেখা দিল। সে ক্রুদ্ধ হয়ে ফটিকের নাকে মুখে আঁচড় কেটে ক্রন্দন অবস্থায় বাড়ি চলে যায়। তাতে খেলাটির পূর্ণ সমাপ্তি ঘটে।
ছুটি গল্পের বড় প্রশ্ন ও উত্তর
----------------------------------------------------------------
4) 'ছুটি' গল্পে মামাবাড়িতে গিয়ে ফটিকের যে দুরবস্থা হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের 'ছুটি' গল্প থেকে উক্ত প্রশ্নটি এসেছে।
• ফটিকের দুরবস্থা : ফটিককে তার মামা বিশ্বম্ভরবাবু কলকাতায় তাঁর বাড়িতে নিয়ে এলে তার মামি একেবারেই অসন্তুষ্ট ছিল । কারণ নিজের তিনটি ছেলেকে নিয়ে তাঁর যে ব্যস্ততার সংসার সেখানে তেরো বছরের অপরিচিত পাড়াগেঁয়ে ফটিককে তিনি 'বিপদের সম্ভাবনা' বলে মনে করেছিলেন। সেই মামির স্নেহহীন চোখে ফটিক 'একটা দুর্গ্রহের মতো' প্রতিভাত হচ্ছিল এবং মামি তাকে কোনো কাজ করতে বললে তাঁকে খুশি করতে সে মনের আনন্দে যতটা আবশ্যক তার থেকে বেশি কাজ করে ফেলত এবং তাতে মামি আরও বিব্রত হতেন। তিনি ফটিককে পড়াশোনায় মন দিতে বললে, তার মানসিক উন্নতির প্রতি মামির এই যত্ন ফটিকের কাছে ছিল 'নিষ্ঠুর অবিচার'। স্কুলেও ফটিক ছিল সকলের চোখে নির্বোধ এবং অমনোযোগী। মাস্টারমশাই ফটিককে এতটাই মারধোর ও অপমান করতেন এবং তার এতটাই দুরবস্থা হত যে মামাতো ভাইরা পর্যন্ত তার সঙ্গে সম্পর্ক স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করত। এরমধ্যে বই হারিয়ে ফেলায় তার মামি তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, "আমি তোমাকে মাসের মধ্যে পাঁচবার করে বই কিনে দিতে পারিনে।” ফটিক এই অনাদর, উপেক্ষা স্পষ্টই বুঝতে পারত। যে কারণে তার জ্বর এলেও সে মনে করেছিল মামি এটাকে 'অনর্থক উপদ্রব' এবং 'অনাবশ্যক জ্বালাতন' হিসেবে দেখবে। ঠিক এই কারণেই সে মামার বাড়ি ত্যাগ করে। কিন্তু পুলিশের সাহায্য নিয়ে যখন তাকে ফিরিয়ে আনা হয় তখন ফটিকের দুরবস্থা আরও বেড়ে যায়। অসুস্থ ফটিককে দেখে তার মামি 'পরের ছেলেকে' বাড়ি
পাঠিয়ে দিতে বলেন। এভাবেই মামার বাড়িতে অপমান আর অনাদরে দিন অতিবাহিত করতে হয়েছিল ফটিককে, যেখান থেকে সে হয়তো মুক্তি পেয়েছিল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
ছুটি গল্পের বড় প্রশ্ন ও উত্তর Class 11
----------------------------------------------------------------
5) "পরদিন প্রাতঃকালে ফটিককে আর দেখা গেল না।"- পরদিন সকালবেলা ফটিককে কেন দেখা যায়নি ? তার খোঁজ কীভাবে পাওয়া গিয়েছিল ? ৩+২
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের 'ছুটি' গল্প থেকে উক্ত প্রশ্নটি এসেছে।
• ফটিককে সকালবেলাতে দেখতে না পাওয়া কারণ : ফটিককে মামার বাড়িতে নানা কারণে বারবার তিরস্কৃত হতে হয়েছিল। এই কারণে একদিন স্কুল থেকে ফেরার পরে যখন তার মাথাব্যথা শুরু হয় এবং শীত করতে থাকে, আর সে বুঝতে পারে যে তার জ্বর আসছে। তখনই ফটিকের বুঝতে পারে, অসুস্থ হলে মামি সেবা যত্ন করবে না। অসুস্থতার সময়ে মা ছাড়া অন্য কারও কাছে কোনোরকম সেবা প্রত্যাশা করা যে উচিত নয় তা-ও ফটিক সহজেই বুঝতে পারে। এই সমস্ত কারণেই বাড়ির লোকদের বিড়ম্বিত না করার জন্যই সে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই পরদিন সকালবেলায় ফটিককে আর দেখা যায় না।
• ফটিককে যেভাবে খোঁজ পাওয়া গেল : ফটিক হওয়ার পর প্রতিবেশীদের বাড়িতে খোঁজ করা হয়, কিন্তু তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না। রাত্রি থেকেই বৃষ্টি পড়ছিল সেইকারণে সকলেই ফটিককে খুঁজতে গিয়ে রীতিমতো ভিজে যায়। অবশেষে কোথাও তাকে না পেয়ে তার মামা বিশ্বম্ভরবাবু পুলিশে খবর দেন। সমস্ত দিনশেষে সন্ধের সময় বিশ্বম্ভরবাবুর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় পুলিশের গাড়ি এবং অবিরাম বৃষ্টিতে এক হাঁটু জলের মধ্য দিয়ে দুজন পুলিশের লোক ফটিককে ধরে নামিয়ে বিশ্বম্ভরবাবুর কাছে নিয়ে আসে।
Chuti Class 11 Qurstion Answer
6) "তিনি ঈষৎ ক্ষুণ্ণ হইলেন।"- এখানে কে ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন ? তার এই ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারণ কি ছিল আলোচনা করো। ১+৪
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের 'ছুটি' গল্প থেকে উক্ত প্রশ্নটি এসেছে। এখানে ফটিকের মা-এর ক্ষুণ্ণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে ।
• ফটিকের মা ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারণ : ফটিক পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি ছোটোভাই মাখনের প্রতি ফটিকের আচরণ, অতিরিক্ত শাসনপ্রবণতা তার মাকে আরও বেশি করে ফটিকের প্রতি বিরূপ করে তুলেছিল। সেই কারণে তাঁর দাদা বিশ্বম্ভরবাবু যখন তাঁর কাছে ছেলেদের পড়াশোনা এবং মানসিক উন্নতি বিষয়ে জানতে চান, তখন মাখনের প্রশংসা করলেও ফটিকের মা ফটিকের উচ্ছৃঙ্খলতা এবং অমনোযোগিতা বিষয়ে অভিযোগ জানান। স্পষ্ট বলেন, 'ফটিক আমার হাড় জ্বালাতন করিয়াছে।" বিশ্বম্ভরবাবু সেইসময় ফটিককে কলকাতায় নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা করানোর কথা বললে, তিনি তাতে সহজেই সম্মতি দেন। ফটিকও এই প্রস্তাবে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। দিনক্ষণ জানতে চেয়ে সে মামাকে অস্থির করে তোলে, উৎসাহে তার রাত্রে ঘুম হয় না। যদিও ফটিকের মামার বাড়ি যাওয়ার বিষয়ে তার মায়ের আপত্তি ছিল না। বরং মাখন এর কথা ভেবে তিনি এই ঘটনায় কিছুটা নিশ্চিন্ত হচ্ছিলেন । কিন্তু ফটিকের বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত উৎসাহ তাকে ক্ষুন্ন করে । এই সব আচরণের জন্যই ফটিকের মায়ের মধ্যে এই আচরণ দেখা দিয়েছিল ।
** ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু - Click Here
----------------------------------------------------------------
7) 'ছুটি' গল্প অবলম্বনে ফটিকের মামির চরিত্রটি সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের 'ছুটি' গল্প থেকে উক্ত প্রশ্নটি এসেছে। এখন আমি নীচে ফটিক মামির চরিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি -
• ফটিকের মামি : সমাজ-সংসারে বহু বিচিত্র ধরনের চরিত্রের মানুষ রয়েছে-প্রত্যেকেই - তারা নিজেদের দোষগুণে কেহ উন্নত চরিত্র আবার কেহ বা নীচু স্তরের চরিত্রের হয়ে থাকে। ফটিকের মামি চরিত্রটি নেতিবাচক চরিত্র, মূলত একমুখী। তিনি হচ্ছেন আত্মসুখী ও স্বার্থপর নারী। সে-জন্য তাঁর চরিত্রটিতে ফুটে উঠেছে নিষ্ঠুরতা, নীচতা, হৃদয়হীনতা প্রভৃতি অমানবিক গুণ। গ্রাম থেকে বালক সর্দার ফটিককে নিয়ে যখন বিশ্বম্ভরবাবু তাঁদের কলকাতার বাড়িতে প্রবেশ করলেন, তখনই মামী অনাবশ্যক পরিবার-বৃদ্ধিতে মনে মনে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। নিজের তিনটি ছেলে নিয়ে শান্তিতেই ছিলেন, তার উপর সহসা একটি তেরো বৎসরের অপরিচিত, অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে ছেলের আবির্ভাবে যে তাঁর সংসারে অশান্তি দেখা দিবে, তা নিয়ে নিজের স্বামী বিশ্বম্ভরের প্রতি রাগান্বিতা এই মহিলা। এ সব বিষয়ে তিনি ঝাঁঝালো সুরে ক্ষোভ প্রকাশ করতে পিছিয়ে আসেন নি। ফটিক কোনো কাজে সাহায্য করলেও তার প্রতিদানে মামীর স্বভাবের যে পরিবর্তন হবে তারও লক্ষণ নেই। একবার স্কুলে ফটিক বই হারিয়ে এলে তিনি যেভাবে শ্লেষপূর্ণ বাক্যে শাসিয়েছিলেন, তাতে মামীর চরিত্রে নিষ্ঠুরতাই প্রকাশ পায়। এর ফলে ফটিক অপমানিত বোধ করে নিঃশব্দে বাড়ি থেকে চলে যায়। অনেক অনুসন্ধানের পর পুলিশ যখন কাক-ভেজা অবস্থায় জ্বরাক্রান্ত ফটিককে নিয়ে এলো তখনো তার প্রতি কোনোরূপ সহানুভূতি প্রকাশ না করে মামীমা বিশ্রীভাবে তিরস্কার করেছিলেন। একবারের জন্য মামীর চরিত্রে শুভ চেতনাবোধের উদয় হয়নি, কারণ হৃদয়হীনতা, স্বার্থপরতা মামীর চরিত্রের প্রধান ত্রুটি ছিল। অতএব বলা যায় মামীর চরিত্রটি ছিল বদমেজাজী, ধৈর্যহীনা এবং স্বার্থপরতায় পরিপূর্ণ থাকায় তাঁর চরিত্রটি একটা স্বাতন্ত্র্য রূপ লাভ করেছে।
'ছুটি' গল্পের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর Class 11
----------------------------------------------------------------
8) "তাহাই উপলব্ধি করিয়া বালকেরা এ প্রস্তাবে সম্পূর্ণ। অনুমোদন করিল”- এখানে বালকেরা কোন্ প্রস্তাব কেন অনুমোদন করেছিল ? সেই প্রস্তাব কার্যকরী করার পথে কোন্ বাধা উপস্থিত হয়েছিল গল্প অবলম্বনে আলোচনা করো ? ৩+২
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের 'ছুটি' গল্প থেকে উক্ত প্রশ্নটি এসেছে।
এখানে বালকেরা নদীর ধারে পড়ে থাকা একটা প্রকাণ্ড শালকাঠের গুঁড়িকে খেলাচ্ছলে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার ফটিকের দেওয়া প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে।
প্রস্তাব অনুমোদন করার কারণ : সর্দার ফটিকের দেওয়া প্রস্তাবকে বালকদল মেনে নিয়েছিল। শালকাঠের টুকরোটি মাস্তুলে রূপান্তর করার জন্য নদীর ধারে রাখা ছিল। বালকদল ভেবেছিল, ব্যক্তি প্রয়োজনের সময় কাঠটা খুঁজে না পেয়ে বিস্মিত এবং বিরক্ত হবে, তার অসুবিধা হবে-এই উপলব্ধি থেকেই তারা ফটিকের প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল।
• প্রস্তাব কার্যকরী করার পথে বাধা : সকলে যখন কোমর বেঁধে কাঠের টুকরোটি গড়ানোর কাজে লেগে পড়বে , ঠিক সেই সময় ফটিকের ছোটো ভাই মাখনলাল গম্ভীরভাবে সেই শালকাঠের গুঁড়ির ওপরে গিয়ে বসে। খেলার প্রতি মাখনের এই ঔদাসীন্য দেখে বালকের দল বিমর্ষ হয়ে যায়। কয়েকজন তাকে সামান্য ঠেললেও সে বিচলিত হয় না। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, “এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী মানব সকল প্রকার ক্রীড়ার অসাড়তা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা” করছে। ফটিক তাকে মারার ভয় দেখালেও মাখনলাল সেই জায়গা ছেড়ে ওঠেনি। এভাবেই বালকদের খেলার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হয়েছিল।
----------------------------------------------------------------
9) "এই অকাল তত্ত্বজ্ঞানী মানব সকল প্রকার ক্রীড়ার অসাড়তা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল।"-'অকাল তত্ত্বজ্ঞানী মানব' বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? কোন্ প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করা হয়েছে ? এই মন্তব্যের কারণ কী ? ১+২+২
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের 'ছুটি' গল্প থেকে উক্ত প্রশ্নটি এসেছে। 'ছুটি' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফটিকের ছোটোভাই মাখনলালকে অকাল তত্ত্বজ্ঞানী মানব বলে বোঝানো হয়েছে ।
গল্পে ফটিকের কথা মতো বালকদলেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, নদীর ধারে মাস্তুল বানানোর জন্য যে প্রকাণ্ড শালকাঠের গুঁড়িটি কেউ রেখেছিল, সেটিকে গড়িয়ে নিয়ে যাবে। এতে যে ব্যক্তির কাঠ, প্রয়োজনের মুহূর্তে তাঁর বিস্ময়, বিরক্তি ও অসুবিধা হবে ভেবে সকলেই উৎসাহিত হয়ে ওঠে। যখন সবাই মহা-উৎসাহে কাজে লেগে পড়েছে তখনই মাখনলাল ছেলেদের বিমর্ষ করে সেই গুঁড়ির ওপরে উঠে বসে। সেই সময় তার মুখের মনোভঙ্গি প্রসঙ্গেই লেখক মন্তব্যটি করেছেন।
মাখনলালের মুখের মনোভঙ্গি ভালো ছিল না। কারণ অন্য ছেলেরা যখন তাদের উদ্ভট খেলা নিয়ে অকারণ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে চাইছিল তখন মাখনলালকে দেখা গিয়েছিল যে, এই বিষয়ে সে সম্পূর্ণ উদাসীন। এমনকি একজন এসে তাকে ভয়ে ভয়ে একটু ঠেললেও সে বিচলিত হয় না। তার এই মনোভঙ্গির কারণেই তাকে 'অকাল তত্ত্বজ্ঞানী' বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
----------------------------------------------------------------
10) 'এমন সময় সেই কাঁচাপাকা বাবুটি ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, 'কী হচ্ছে তোমাদের'- এখানে 'এমন সময়' বলতে কোন্ সময়কে বোঝানো হয়েছে ? কাঁচা পাকা বাবুটি কে ? তখনকার পরিবেশ কিরূপ দাঁড়াল আলোচনা করো ?
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের 'ছুটি' গল্প থেকে উক্ত প্রশ্নটি এসেছে।
ফটিককে বাঘা আড়কোলা করে বাড়িতে আনামাত্র তার মা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে মাখনকে মারার কৈফিয়ত তলব করলে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা সৃষ্টি হলে ঐ সময়কে 'এমন সময়' বলা হয়েছে।
কাঁচাপাকা বাবুটি হচ্ছেন ফটিক-মাখনদের মামা বিশ্বম্ভরবাবু।
ফটিকের মা তার দাদা বিশ্বম্ভরবাবুকে দেখে বিস্ময়ে আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়েন এবং প্রণাম করেন। অনেক দিন পূর্বে তিনি পশ্চিমে গিয়েছিলেন, সে সময় তিনি বোনের বাড়িতে এসেছিলেন এবং সাক্ষাতে ভাইবোনের বেশ আনন্দের পরিবেশে কাটাবেন।
Class 11 Chuti Question Answer
----------------------------------------------------------------
11) 'বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন।'- উদ্ধৃতিটি কোন্ গল্পের ? বিধবা কে ? কোন্ প্রস্তাবে কে রাজি হলো ?
উত্তর : উপরোক্ত বাক্যটি বাংলা সাহিত্যের গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের 'ছুটি' গল্প থেকে উক্ত প্রশ্নটি এসেছে।
বিধবা হচ্ছেন ফটিক ও মাখনের মা এবং বিশ্বম্ভরবাবুর বোন।
বিশ্বম্ভরবাবু তার বোনের বাড়ি এসে জানতে পারলেন ফটিকের অবাধ্যতা ও পড়াশুনায় অমনোযোগ এবং মাখনের শান্ত স্বভাব এবং বিদ্যানুরাগের কথা শুনে তিনি ফটিককে কলকাতায় নিজের নিকট রেখে পড়াবেন বলে প্রস্তাব দেন। ফটিকের মা এ প্রস্তাবে সম্মত হন এবং এতে ফটিকেরও আনন্দ হয়।
'ছুটি' গল্পের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর Class 11 | Class 11 Chuti QUESTION ANSWER
12) "...পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই।” - এখানে কাকে 'বালাই' বলা হয়েছে ? লেখককে অনুসরণ করে এই মনোভাবটি বিশ্লেষণ করো। ১+৪
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গল্পগুচ্ছ' গ্রন্থের 'ছুটি' গল্প থেকে উক্ত প্রশ্নটি এসেছে।এখানে ফটিকের মামির ভাবনাসূত্রে লেখকের মনে হয়েছে যে তেরো-চোদ্দো বছরের ছেলে পৃথিবীতে একটা 'বালাই'।
• মন্তব্যটি বিশ্লেষণ : ফটিককে তার মামা বিশ্বম্ভরবাবু কলকাতায় নিজের বাড়িতে নিয়ে এলে তাঁর স্ত্রী সেই সিদ্ধান্ত মানতে পারে না। নিজের তিন ছেলের সঙ্গে অতিরিক্ত আর-একজনের দায়িত্ব নেওয়া কতটা ঝামেলার হতে পারে তা বিশ্বম্ভরবাবু বোঝেননি বলে তাঁর স্ত্রী তাঁর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই প্রসঙ্গে লেখকের মনে হয়েছে যে, ফটিকের বয়স তার বিরুদ্ধে যায়। একটি তেরো-চোদ্দো বছরের ছেলের কোনো শোভা নেই, আবার কোনো কাজেও লাগে না। তাকে দেখে স্নেহের উদ্রেক হয় না, আবার তার সঙ্গসুখও একেবারেই প্রার্থনীয় নয়। "তাহার মুখে আধো-আধো কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগলভতা।" তার হঠাৎ বেড়ে ওঠার কারণে কাপড়- চোপড় ছোটো হয়ে যায় এবং সকলে সেটাকে একটা 'কুশ্রী স্পর্ধা' বলে মনে করে। শৈশবের সৌন্দর্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা হঠাৎ করে চলে যায় এবং তার জন্য সকলে সেই কৈশোরকেই দায়ী করে। শৈশব ও যৌবনের অনেক দোষ মাফ করে দেওয়া যায়, কিন্তু এই বয়সের কোনো স্বাভাবিক ত্রুটিকেও সকলের অসহ্য বলে মনে হয়।
**** উপরের প্রশ্নগুলি Class 11 semester 2 bengali পরীক্ষায় বারবার আসে।
----------------------------------------------------------------
আরো পড়ুন | Link |
---|---|
1. একাদশ শ্রেণির নতুন বাংলা প্রশ্নপত্র 2025 | Click Here |
6. একাদশ শ্রেণির নতুন ইংরেজি সিলেবাস | Click Here |
4. একাদশ শ্রেণির নতুন দর্শন প্রজেক্ট খাতা | Click Here |
5. ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু | Click Here |
SOCIAL MEDIA | FOLLOW |
---|---|
Whatsapp Group | Click Here |
Telegram | Click Here |
# শেষ কথা :
আমাদের এই Website থেকে Class 9, Class 10, Class 11 First Semester, Class 11 Semester 2 এবং Class 12 semester 3, Class 12 Semester 4 এর সমস্ত নোটস, সাজেসন, প্রজেক্ট সহ পরীক্ষার আরো অন্যান্য তথ্য সম্পূর্ণ Free তে পেয়ে যাবে। আমাদের এই লেখাগুলো যদি তোমাদের কাজে লাগে তবে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। আর ভালো লাগলে অবশ্যই Comment করে জানাতে ভুল না।
Thank You !
Thank you sir ji
উত্তরমুছুন