ভাবসম্মিলন কবিতা - বিদ্যাপতি
• ভূমিকা :
তোমরা জানো যে WBCHSE Board এর নতুন নিয়ম অনুসারে Class 11 Second Semester Bengali বা বাংলা পরীক্ষার জন্য তিনটি কবিতা পড়তে হবে - বিদ্যাপতির লেখা 'ভাবসম্মিলন', লালন শাহের লেখা 'লালন শাহ্ ফকিরের গান', এবং জয় গোস্বামীর লেখা 'নুন' কবিতা। একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিষ্টার বাংলা বিষয়ে মোট 40 নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। এই 40 নম্বরের মধ্যে উপরের তিনটি কবিতা থেকে 2 নম্বরের একটি প্রশ্ন এবং 3 নম্বরের একটি বড়ো প্রশ্ন করতে হবে অর্থাৎ মোট 2+3=5 নম্বর Class 11 Semester 2 Bengali পরীক্ষায় কবিতা থেকে আসবে। আজকের এই লেখাতে তোমাদের কাছে আলোচনা করবো বিদ্যাপতির লেখা গুরুত্বপূর্ণ একটি কবিতা বা পদ 'ভাবসম্মিলন'।
• কবি - পরিচিতি :
বিদ্যাপতির জন্ম দ্বারভাঙা জেলার মধুবনী পরগনার বিসফী গ্রামের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। তিনি ভাবসম্মিলনের শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন এবং পঞ্চদশ শতকের মৈথিলি কবি। বঙ্গদেশে তার প্রচলিত পদাবলীর ভাষা ব্রজবুলি। তিনি 'মৈথিল কোকিল' এবং 'অভিনব জয়দেব' নামেও পরিচিত। তার রচিত রাধাকৃষ্ণ পদের সংখ্যা প্রায় ৫০০ টিরও বেশি।
বিদ্যপতির রচনাবলী : তার রচনা গুলি হল - কীর্তিলতা, ভূপরিক্রমা, কীর্তিপতাকা, পুরুষ পরীক্ষা, শৈক্সর্বস্বসার, গঙ্গাবাক্যাবলি, বিভাগসার, দানবাক্যাবলি ইত্যাদি।
• ভাবসম্মিলন কবিতার উৎস :
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলনের পাঠ এই পদ বা কবিতায় অনুসরণ করা হয়েছে।
• বিদ্যপতির লেখা 'ভাবসম্মিলন' কবিতা :
ধানশী
"কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।
চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর।।
পাপ সুধাকর যত দুখ দেল।
পিয়া-মুখ-দরশনে তত সুখ ভেল।।
আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই।
তব হাম পিয়া দূর দেশে না পাঠাই।।
শীতের ওড়নী পিয়া গীরিষির বা।
বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না।।
ভণয়ে বিদ্যাপতি শুন বরনারি।
সুজনক দুখ দিবস দুই-চারি।।"
• ভাবসম্মিলন কবিতাটি লাইন ধরে ধরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা :
" কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।
চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর।।"
ব্যাখ্যা : সখি আমার আনন্দের শেষ নেই। আমার প্রেমিক বা আত্মার প্রিয়তম কৃষ্ণ চিরদিনের জন্য আমার ঘর হয়েছে। অনেক দিন গরম দেওয়ার পর বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে যেমন চারপাশ রোমাঞ্চিত ও আনন্দিত হয়ে ওঠে। ঠিক তেমনি দীর্ঘ বিরহের পর প্রিয় কৃষ্ণকে কাছে পেয়ে রাধার মনে অবস্থা তেমনি হয়েছে। তাই আজ রাধার আনন্দ শেষ নেই। কারণ কৃষ্ণ এরপর রাধার সঙ্গে চিরকাল থাকবে।
" পাপ সুধাকর যত দুখ দেল।
পিয়া-মুখ-দরশনে তত সুখ ভেল।।"
ব্যাখ্যা : কৃষ্ণকে কাছে না পেয়ে পাপী চাঁদ রাধাকে যে অসীম দুঃখ দিয়েছে, আজ কৃষ্ণের মুখ দেখে রাধা সেই সমস্ত দুঃখ ভুলে সুখ লাভ করেছেন। যেমন এখানে কৃষ্ণকে না পাওয়ার দুঃখ আছে, তেমন আছে কৃষ্ণকে লালন করার আনন্দ।
" আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই।
তব হাম পিয়া দূর দেশে না পাঠাই।। "
ব্যাখ্যা : কোনো কিছুর বিনিময়ে রাধা আজ তার প্রিয়তম কৃষ্ণকে ছাড়বেন না। রাধাকে কেউ যদি আঁচল ভরে মহামূল্যবান রত্ন দান করেন, তবুও তিনি কৃষ্ণকে দূরদেশে পাঠাবেন না। মেয়েদের কাছে অলঙ্কার বড়ো হলেও, রাধার কাছে কৃষ্ণই বড়ো অলঙ্কার।
" শীতের ওড়নী পিয়া গীরিষির বা।
বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না।। "
ব্যাখ্যা : রাধার কাছে কৃষ্ণ কে ? চারটি উপমা ব্যবহার করে বিদ্যাপতি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন । রাধা বলেছে রাধার কাছে কৃষ্ণ হল - শীতের চাদর বা ওড়না , বর্ষাকালের ছাতা, গ্রীষ্মকালের বাতাস, এবং সমুদ্রের নৌকা। আমরা জানি মানুষ এই চারটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়কে অবহেলা করতে পারেন না। রাধার কাছে কৃষ্ণ এই চারটি প্রয়োজনীয় বিষয়ের মতো একান্ত প্রয়োজন।
" ভণয়ে বিদ্যাপতি শুন বরনারি।
সুজনক দুখ দিবস দুই-চারি।। "
ব্যাখ্যা : রাধার ভাবোচ্ছ্বাস দেখে পদকর্তা বিদ্যাপতি রাধিকাকে উপদেশ দিয়েছেন যে, ভালো লোকের কাছে দুঃখ দু'চারদিনের জন্য থাকে। ভালো লোক যথার্থ সুখকে যথার্থভাবে অনুভব করেন।
আরো পড়ুন : একাদশ শ্রেণির নতুন ইংরেজি সিলেবাস - Click Here
ভাব সম্মিলন class 11
• ভাবসম্মিলন' কবিতার বিষয়বস্তু :
রাধা ভাব সম্মিলন পদে তার সখীকে নিজের আনন্দের কথা বলেছেন। সেই আনন্দের কারণ চিরকালের জন্য শ্রীকৃষ্ণকে তিনি তাঁর কাছে পেয়েছেন। তাকে চাঁদের আলো যত কষ্ট দিয়েছে প্রিয়তম কৃষ্ণের মুখ দেখে তিনি ততটাই সুখ পেয়েছেন। তাই রাধা বলেছেন যদি কেউ আঁচল ভরে মহামূল্যবান রত্ন দেয় তবু তার প্রিয়তম কৃষ্ণকে তিনি দূরদেশে পাঠাবেন না। কারণ তার প্রিয় কৃষ্ণ তার কাছে শীতকালের ওড়না, গ্রীষ্মকালের বাতাস, বর্ষাকালের ছাতা, সমুদ্রের নৌকার মতো।তাই বিদ্যাপতি ভনিতাই রাধাকে উপদেশ দিয়েছেন যে ব্যক্তি সুজন বা সৌভাগ্যবতী হয় তার দুঃখ চিরকাল থাকে না, কিছু দিন থাকে।
• ভাবসম্মিলন কবিতার শব্দার্থ ও টীকা :
কহব - বলবো, আনন্দ ওর - আনন্দের সীমা, মন্দির - গৃহে, মোর - আমার, সুধাকর - চাঁদ, দেল - দিল, পিয়া - প্রিয়, ভেল - হল, নির্ধন - ধনহীন, প্রিয়ার - প্রিয়তমর, কৈলু - করলাম, যতন - যত্ন, অব - এখন, হম - আমি, জানিলু - জানিলাম। আঁচর - আঁচল, মহানিধি - মহারত্ন, ওড়নি - চাদর, গীরিষির - গ্রীষ্মের, বা - বাতাস, বরিষায় - বর্ষায়, ছত্র - ছাতা, দরিয়ার - সমুদ্রের, না - নৌকা, ভণয়ে - বলেন, শুন - শোন, বরনারি - শ্রেষ্ঠ নারী, সুজনক - ভালো লোকের, দুখ দিবস - দুঃখের দিন।
Class 11 kobita Bhabsammilan
• ভাবসম্মিলন কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব :
বিদ্যপতির লেখা ভাবসম্মিলন কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর একটি পর্বে বা পোষ্টে লেখা সম্ভব নয়, তাই 'ভাব সম্মিলন' কবিতার ২ নম্বরের ও ৩ নম্বরের সমস্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর দ্বিতীয় পর্বে দেওয়া আছে। 'ভাবসম্মিলন' কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর পেতে Menu Option এ ক্লিক করতে দেখতে পারো।
আরো পড়ুন | Link |
---|---|
1. ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু | Click Here |
2. একাদশ শ্রেণির নতুন ইংরেজি সিলেবাস | Click Here |
4. ছুটি - গল্পের বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | Click Here |
5. একাদশ শ্রেণির নতুন বাংলা প্রশ্নপত্র | Click Here |
SOCIAL MEDIA | FOLLOW |
---|---|
Whatsapp Group | Click Here |
Whatsapp Group | Click Here |
Telegram | Click Here |
ভাব সম্মিলন প্রশ্ন উত্তর
# শেষ কথা :
আমাদের এই Website থেকে Class 9, Class 10, Class 11 First Semester, Class 11 Semester 2 এবং Class 12 semester 3, Class 12 Semester 4 এর সমস্ত নোটস, সাজেসন, প্রজেক্ট সহ পরীক্ষার আরো অন্যান্য তথ্য সম্পূর্ণ Free তে পেয়ে যাবে। আমাদের এই লেখাগুলো যদি তোমাদের কাজে লাগে তবে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। আর ভালো লাগলে অবশ্যই Comment করে জানাতে ভুল না।
Thank You
WB Semester Team
Thank you sir.
উত্তরমুছুনউপকৃত হলাম🙏
উত্তরমুছুন